Header Ads

অবন্তিকা ❑ উপন্যাস ❑ কিশোর পণ্ডিত ❑ পর্ব ০৮



উপন্যাস

ন্তিকা

কিশোর পণ্ডিত

পর্ব_

ভবের হাটের রঙ্গ সাঙ্গ করে রাধেশ্যাম চৌধুরী অচিনপুরে চলে গেলেন কান্নাকাটির হুলস্থুল শেষে তার শব শ্মশান ঘাটে নিয়ে যাওয়া হল স্নান আদিত্য চৌধুরী করাল স্নান শেষে তার শব চিতাকাষ্ঠে ওঠাবার পর মুখাগ্নির পালা আসলে আদিত্য চৌধুরী মুখাগ্নি করতে অস্বীকার করল কেঁদে কেঁদে বার বার শাস্ত্রের বিধানমত সুকমলকে মুখাগ্নি করতে বলল এতে সবাই রাজি থাকলেও কমলা কুন্তলা চৌধুরী বাদ সাধলেন তিনি বললেন তার স্বামীর শেষ ইচ্ছা মতই কাজ হবে মুখাগ্নি সুকমল করতে পারবে না তিনি কথা আবার সবার সামনে স্পষ্ট করে দিলেন উপস্থিত আর সকলে সব বুঝে শুনে আদিত্য চৌধুরীকেই মুখাগ্নি করতে বললেন আদিত্য তার অনিচ্ছা সত্যেও কাজ করিতে ইচ্ছুক হল এবং সেই রাধেশ্যাম চৌধুরীর মুখাগ্নি করল দুরে দাড়িয়ে সুকমল সবই দেখল কিন্তু কিছু করবার সাহস হল না সে তার কৃত অপরাধের ক্ষাণিক প্রায়শ্চিত্য করল ভেবে সামনে আগাল না এমনকি চিতার কাছেও গেল না শেষকৃত্য অনুষ্ঠান যখন শেষ হল তখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হয়েছে সবাই যার যার বাড়ীতে চেলে গেলেন

দশ দিন পর এগার দিন আসলে সুকমলদের বাসায় আরেকবার শাস্ত্রলাপ হল শাস্ত্রমতে সুকমলকে শ্ৰাদ্ধ করতে হয় কিন্তু এবারেও সুকমল তা পারল না আদিত্যকেই তার জ্যাঠিমা শ্রাদ্ধ কাজ সারতে বললেন তার পুত্র থাকিলেও অপুত্র শ্রাদ্ধ সারবে কেন এমন প্রশ্ন গুরুজনেরা বার বার করলেন কিন্তু এতে কোন কাজ হল না শেষে কমলা কুন্তলা চৌধুরীর ইচ্ছামত শাস্ত্রীয় কাজ অশাস্ত্রীয়ভাবে আদিত্যের হাতে শেষ হল আদিত্য তার নিজ হাতে ষােড়শ দান করে আদ্য শ্রাদ্ধ করল এবারেও তার অনিচ্ছা সত্যেও ইচ্ছুক হতে হল সুকমল তার পিতার সকল পিতৃ কার্য হতে বঞ্চিত হল শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে প্রকাশ বাবুর পরিবারের কাজের লােক সহ সকলে আসল কিন্তু অবন্তী আসল না তারা কেউ অবন্তীকে জোরও করল না অবন্তীর ইচ্ছানুসারে সে একাই বাসায় রয়ে গেল রাতে যখন প্রকাশ বাবুরা বাসায় ফিরলেন তখন তারা দেখল অবন্তি তার ঘরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে তারা তার ব্যথা বুঝলেন সান্ত্বনা দেবার সাহস পেলেন না কাছে কেউ গেল না অবন্তী কাঁদতেই রইল কার্তিক সাহস করে তার কাছে আসল এবং সান্ত্বনা দিয়ে বলল কাঁদবেন না দিদিমনি টুকু মনে রাখবেন ভগবান যা করে মঙ্গলের জন্যই করেন ভগবান তার কাজ করেছে আপনার করার কিছুই নেই

কষ্টে অবন্তি বাঁচবে না মরবে বুঝা যেতে বড় কষ্ট হল তিন দিন পর বুঝা গেল কার্তিকের কথাই ঠিক হল ভগবানের কাজ ভগবান করছে তাতে অবন্তির কি আসে যায় অবন্তি আর গলল না সে কঠিন হয়ে গেল সে যে কষ্ট পেল সে দুঃখ ভুলে গেল

এমন অঘটন , অতিকষ্টের অমঙ্গলের দিনে হঠাৎ আগরতলা হতে দেবাশীষ রায় এসে উপস্থিত হল দেবাশীষকে দেখে সবাই যেমন অবাক হলেন তেমন অবাক হল অবন্তি প্রকাশ বাবু আত্মীয়ের পরিচয় দিলেন তিনি বললেন আদিত্য নারায়ণের একমাত্র ছেলে দেবাশীষ রায় ওরা আগরতলা থাকে ৭১ এর আগে দত্তক এর মত থাকত নারায়ণ রায় তাদের গ্রামের বাড়ী লাকসামে যুদ্ধ যখন বেধে যায় তখন আদিত্য নারায়ণ চলে যায় ভারতের আগরতলায় তাদের সাথে পত্রালাপ খুবই হত নারায়ণ রায় প্রকাশ বাবুকে জানিয়ে ছিল তারা বেড়াতে আসবে কিন্ত কখন আসবে তা বলেনি আজ এসে হাজির হয়েছে দেবাশীষ দেবাশীষ ছেলেটা বেশ জোকার টাইপের ছেলে সে হাসাতে পারে বেশ প্রায় 'ফুট লম্বা মাথায় ঝাকড়া চুল লিকলিকে গড়ন তেমন ফর্সা নয় দেবাশীষ ওকে দেখলেই যেন হাসি আসে দুদিন ধরে সবাইকে হাসাচ্ছে দেবাশীষ কিন্তু অবন্তি হাসছে না তাকে হাসাতে চাই কাজটা দেবাশীষকে দিলেন প্রকাশ বাবু

একদিন গ্রীষ্মের পড়ন্ত বিকেলে অবন্তি কি কাজে যেন দেবাশীষকে নিয়ে ইন্দিরা রােড হয়ে সংসদ ভবন এলাকায় যাচ্ছিল সংসদ ভবনের পাশে যেতেই দেবাশীষ আঙ্গুল দিয়ে এক নব পরিনীতাকে দেখিয়ে বলল বাঃ দিদি দেখেন দেখেন বউটাকে কেমন মানিয়েছে কি সুন্দর দেখতে আহা শাড়ীটি কত সুন্দর শাড়ীতে তাকে কি সুন্দর মানিয়েছে দেবাশীষের কথামত অবন্তি সংসদ ভবনের মাঠে দাড়িয়ে থাকা এক রমনীকে লক্ষ্য করল বুঝল নতুন বউ দেবাশীষ আবার বলল আচ্ছা বলতাে দিদি ওর স্বামী কে ? দেবাশীষের বােকামী প্রশ্নে উত্তর করল না অবন্তি আবার ওই বধুর দিকে তাকাল তাকাতেই দেখল সুকমলকে সুকমল বাদাম নিয়ে মেয়েটিকে ডাকছে কৃষ্ণা এই কৃষ্ণা এদিকে এসাে সুকমলকে দেখে অবন্তি দেবাশীষের আড়ালে চলে গেল দেবাশীষ দেখল অবন্তি নিজেকে আড়াল করছে কি হেতু দেবাশীষ বুঝল না কিন্তু সে অবন্তিকে আড়াল করে রাখল অবন্তি দেবাশীষকে বলল দেবাশীষ তুমি খুব বুদ্ধির সাথে জানাে বধু পুরুষটার যে পুরুষ বাদাম নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওর কে হয় পারবে তাে ? একি বললেন দিদি এটা কোন ব্যাপার হল পরক্ষণেই জোকার দেবাশীষ তাদের নিকট চলে গেল এবং তার সুচতুর বুদ্ধির সাথে জেনে নিল তাদের সম্পর্ক পরিচয়

কৃষ্ণা কাবেরী দাস বাড়ী সিলেটের শ্রীমঙ্গলে পিতা নীল কান্ত দাস বর্তমান নিবাস লন্ডন অঢেল সম্পদের মালিক তারা সুকমল তার এক বন্ধুর মাধ্যমে কোন এক সন্ধ্যায় কৃষ্ণার সাথে তার পরিচয় হয় সুপুরুষ সুকমল চৌধুরীকে দেখে কৃষ্ণার খুব ভাল লাগে কৃষ্ণাই আগ বাড়িয়ে ভালবাসার প্রস্তাব দেয় তাকে সুকমল প্রথম থেকে একটু গড়রাজি থাকলেও পরে তার আসল চেহারা জাগ্রত হয় এবং পরে রাজি হয়ে যায় সে সুভাষিনী কৃষ্ণা তার মধুর কথা দ্বারা বস করে নেয় সুকমলকে পরে নীল কান্ত দাস তার ডাক্তার মেয়েকে সুকৌশলে চাপিয়ে দেয় সুকমলের ঘাড়ে সুকমল প্রথমে তার মাকে কৃষ্ণার কথা জানালে তারা ক্ষীপ্ত হয়ে যান ক্ষেপে যান ঠিকই কিন্তু নিজের মধ্যেই চাপিয়ে রাখেন সে কথা শেষ বারে যখন সুকমল কৃষ্ণাকে নিয়ে তাদের ঢাকার বাসায় ওঠেন তখন অবগত হন রাধেশ্যাম চৌধুরী তাদের দেখে নীল হয়ে যান তিনি অবন্তি আর প্রকাশ বাবুদের পরিবারকে দেয়া কথা কি করে ফিরিয়ে নিবেন তিনি তিনি ভেবেছেন কি আর হল কি অবন্তিকে তিনি কি বলবেন ভেবে স্ট্রোক করেন তিনি দুই ডাক্তারে মিলেও কিছু করতে পারে না তারা শেষে রাধেশ্যাম বাবু বুঝেন তার সময় শেষ শেষ সময়ে রাধেশ্যাম বাবু তার স্ত্রীকে বিভিন্ন আদেশ দিয়ে যান তার শেষ আদেশমত কমলা কুন্তলা দেবী সব কাজ করে এসেছে যেমন তার দেবর পুত্র আদিত্যকে দিয়ে মুখাগ্নি থেকে শ্রাদ্ধ সকলি করিয়েছে কমলা কুন্তলা চৌধুরী দেখলেন তার সংসারে তার স্বামী নেই যাকে পুত্রবধু করে ঘরে আনতে ভীষণ ইচ্ছে করেছিলেন সে অবন্তিও তার সংসারে আসবে না আছে শুধু তার অবাধ্য পুত্র সুকমল আর তার স্ত্রী কৃষ্ণা কৃষ্ণাকে তিনি মেনে নিতে পারলেন না শেষে এক কঠিন সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি তার সিদ্ধান্ত স্বামীর আদেশ মত রাধেশ্যাম বাবু তাকে যে সম্পত্তি এবং ব্যাংক ব্যালেন্স দিয়ে ছিলেন তাই নিয়েই তিনি পুত্র থেকে আলাদা হয়ে গেলেন পিতার নামের সকল সম্পত্তির মালিক হল সুকমল কিছু দিন ঢাকায় থেকে আর কিছুই ভাল লাগল না কমলা কুন্তলা দেবীর তাই তিনি অবন্তির সাথে তার শেষ বারের মত দেখার জন্য ইচ্ছা পােষণ করলেন অবন্তির সাথে তার শেষ দেখা হল শেষ কাঁদা কেঁদে তিনি ঢাকার পাঠ চুকিয়ে চট্টগ্রামে তার ছােট ভাইয়ের সাথে বসবাস করতে লাগলেন জীবনে যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিন তিনি পুত্রের মুখ দেখেন নাই পুত্র সুকমল শতবার থেকে সহস্রবার ক্ষমা চাইলেও মাতা তার পুত্রের কৃত অপরাধের ক্ষমা করেন নাই শেষে কোন এক দশমীর দিন তিনি দেবী দূর্গার সাথে সঙ্গ ধরেন

সুকমলের বুদ্ধির বিকাশ ঘটল সে যা করেছে সবই ছিল ভুল সে আজ তা বুঝতে পারছে আরও একটু বেশী বুঝেছিল কৃষ্ণার বরাবরের ব্যবহারে সুকমল যে কৃষ্ণার স্বামী এরকম ভাবতই না কৃষ্ণা তার যা ইচ্ছা শুধু তাই করে যেত নিজ ইচ্ছায় কৃষ্ণার বহু বন্ধু ছিল কেউ আসত সকাল বেলায় কেউ দুপুরে আর কেউ রাতের বেলায় সুকমল বার বার কৃষ্ণাকে তার বন্ধুদের সঙ্গ ত্যাগ করতে বলেছিল কিন্তু কৃষ্ণা তার কোন কথাই শুনতা না কৃষ্ণার অগনিত বন্ধুদের মধ্যে চতুর্দশীপদ গােস্বামী সূর্য ঠাকুরকেই ভাল করে চিনত সুকমল প্রথমে বাড়ীর আশে পাশে ঘুর ঘুর করত সূর্য ঠাকুর পরে প্রকাশ্যে আসে একদিন ভাের বেলা সুকমল ঘুম থেকে জেগেই ড্রইং রুমে দেখতে পায় সূর্য ঠাকুর বসে আছে তাকে দেখে সুকমলের মাথা চটে যায় তাকে অপমান করে বের করে দেয় সুকমল এই নিয়ে কৃষ্ণার সাথে বিরােধ বাধে সুকমলের কৃষ্ণা যেমন রাগে সুকমল রাগে তার চেয়ে চারগুণ শেষে সেদিন ভয় পেয়ে থেমে যায় কৃষ্ণা সূর্য ঠাকুর বসে থাকল না একদিন সুকৌশলে অপমানের শােধ নেয় সে গুন্ডা দিয়ে পিটায় সুকমলকে একদিন আদিত্য দেখে রাস্তায় পরে আছে সুকমল তাকে তুলে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে দেয় সে পরে সুকমল সুস্থ হওয়ার পর সব জানাজানি হয়ে যায় সূর্য ঠাকুর কাজটা করেছিল কৃষ্ণা সবশুনে বুঝে ত্যাগ করে সূর্য ঠাকুরকে কৃষ্ণা সুকমলকে বুঝায় সূর্য ঠাকুরকে সে ঘৃণা করে বাদ দিয়েছে এমন বন্ধুকে কিন্ত আবার সঙ্গ করে নেয় অন্য বন্ধুদের সাথে মনের দুয়ার খুলে রাখে নতুন বন্ধুর আশায়

চলবে......

 

No comments

Powered by Blogger.