Header Ads

অবন্তিকা ❑ উপন্যাস ❑ কিশোর পণ্ডিত ❑ পর্ব ০৭



উপন্যাস

ন্তিকা

কিশোর পণ্ডিত

পর্ব_

শ্রী চরণ কমলেষু দিদি ,

কেমন আছেন জানিনা , তবে ভগবান যেন একটু সুখে রাখতে কৃপণতা না করে তার জন্য বার বার আবেদন করি আর কথাই বা বলি কোন জোরে আজ আপনাকে যে খবর জানাতে চাচ্ছি তাতো আরও অতি দুঃখের যেমন করে হঠাৎ আপনার নীল মণিকে কাছে পেয়েছিলাম , ঠিক তেমনি করে হারিয়ে ফেলেছি পার্থকে পেয়ে খুব খুশী হয়েছিলাম মনে হয়েছিল ভগবান বুঝি একটু ঋণ পরিশােধ করতে তাকে আমার কাছে পাঠিয়েছে কিন্তু তা আর হল না আপনারাই জয়ী হয়ে রইলেন আমি অভাগা আপনাদের কাছে ঋণী হয়েই রইলাম গত - দিন ধরে পার্থ আমার বাড়ী ছেড়ে চলে গেছে কোথায় গেছে কি কারণে গেছে কেনই বা চলে গেল তা কিছুই জানি না হয়ত আমাদের কারও কাছ থেকে কোনভাবে আঘাত বা কষ্ট পেয়েছে তার জন্য হয়ত এমনটি করেছে বিশ্বাস করুন দিদি আমি পার্থকে কখনাে কোনাে আঘাত দিই নি কোন কষ্টের কারণ আমি নই কোন অনাদর করিনি আমার মানসিকতায় আমার বিবেক যা ভাল বলেছে তার সাথে আমি তেমনি করেছি আবার মন্দ বললে তাকে শুধরে দিয়েছি আমার মাধ্যমে তাকে যতদুর সম্ভব সাহায্য করেছি তার ভাল সব সময় চেয়েছি তার মঙ্গলের জন্য ভগবানের কাছে প্রার্থনা করতে এতটুকু কৃপণতা করিনি তাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নির্ভয়ে অনেক রাত ভেবেছি তবু তাকে হারালাম কি জবাব দিব আপনাকে কি বলব কিভাবে বলব বলার ভাষা নেই আমার আমি অতি দুর্ভাগা আমি অতি ভাগ্যহীন আমি অধম ঋণী হয়েই রইলাম পাপিষ্ঠ ভেবে অতি মূঢ়কে ক্ষমা করার চেষ্টা করবেন মুখ দেখাব না ভেবে লজ্জায় কাছে আসতে সাহস পেলাম না আর আপনার নীলমণির কোন খবর পেলে আরেকবার দয়া করে এহীনকে জানাতে চেষ্টা করবেন সবশেষে আপনার দীর্ঘায়ু সুস্বাস্থ্য সুদিনের প্রতাশ্যা করে লেখা শেষ করলাম

ইতি

বিনয়াবনত

অতি দুঃখী প্রকাশ রায়

প্রকাশ বাবুর চিঠিটি পড়ে যুথিকা অশ্রুসিক্ত দু'নয়ন তার শাড়ীর আঁচল দিয়ে বার বার মুছলেন আর ভাবলেন ,পার্থ কি কাজটাই না করেছে এমন দেবতুল্য মানুষটাকে কি আঘাত দিয়েছে এমনটি করা তার কখনাে উচিত হয়নি এসেই যদি পড়বি তাকে বলে আসলেই তাে হতাে মনে মনে পার্থকে বকলেন আবার অবনত চিত্তে তার মনের কষ্টের কথাও ভাবলেন এও বুঝলেন তার আশায় কি আঘাতই না করেছে অবন্তি। আবার পরক্ষণেই কঠিন হয়ে ভাবলেন না না অমন আশা করা পার্থের ঠিক হয়নি বামন হয়ে চাঁদ ধরা এটা কখনাে ঠিক হয়নি ওর কোথায় প্রকাশ বাবু আর কোথায় আমরা হতচ্ছাড়া দরিদ্ররা জেনে শুনে আগুনে হাত দিলে তাে হাত পুড়বেই জেনে শুনে বিষ পান করলে সে তাে মরবেই আবার এও ভাবলেন ভালবাসা কি জাত কুল মানে ধনী গরীব মানে ? না মানে না , কিছুই মানে না এমন আগুণে যে পুড়েছে সে বুঝেছে কেমন তার তাপ কেমন তার দাহ্যতা বুঝেছি আমি শেষে আমার সন্তানও বুঝল ভেবে ভেবে যুথিকা মনস্থির করলেন অতি দ্রুত প্রকাশ বাবুকে পার্থের সংবাদ জানিয়ে চিঠি লিখবেন পার্থ যে গ্রামে ফিরে এসেছে আমার কাছে এসেছে টুকু জেনে অন্তত স্বস্তি পাবে যে পার্থ তার মায়ের কাছেই আছে

ডাক পিয়ন যখন একটা চিঠি দিল তখন প্রকাশ বাবু একটি জরুরী কাজে হাজিরা দিয়ে তার মক্কেলকে রক্ষা করার কথা ভাবছেন কিন্তু যখনই দেখলেন বিহারপুরের চিঠি তিনি সকল কাজ বাদ দিয়ে চিঠি পড়তে বসে পরলেন

স্নেহের ভাই প্রকাশ ,

পত্রে শুভেচ্ছা রইল আশা করি ভগবানের কৃপায় কুশলেই আছাে কি ভাবে যে তােমাকে কি বলব ভেবে পাচ্ছি না তােমার চিঠি পেয়ে সবই জানলাম তােমার দুঃখও বুঝেছি কে কখন যে কাকে দুঃখ দেয় বলা মুশকিল তুমি দুঃখ পেয়েছ বলে আমি খুব কষ্ট পেয়েছি পার্থের জন্য ভেবনা জল গড়িয়ে নিচের দিকেই আসে সেও গড়িয়ে গড়িয়ে তার নিজ জায়গায় এসেছে আমার কাছে ফিরে এসেছে দুঃখীর সন্তান দুঃখীনীর কাছে আছে তবে একটু কষ্ট পেয়েছে কষ্ট পাবারই কথা কেউ যদি জেনেশুনে আগুনে হাত দেয় হাত তাে পুড়বেই দুঃখই যদি চাইবার থাকে তবে তাে দুঃখ অবশ্যম্ভাবী বুকটা ওর খুব ছােট কিন্তু আশা করেছিল খুব বড় তার আশা নিরাশায় পরিনত হয়েছে দুঃখীনীর কথা মনে আছে জেনে খুব খুশী হয়েছি সম্ভব হলে মনে রেখ আমাদের সুখের জন্য কিছু করতে গিয়ে ভুল করাে না ভগবান সইবে না। আমাদের কোন অভিশাপ আছে কপালে সুখ সহে না দুঃখেই যেন থাকি ভগবানকে যেন না ভুলি তােমার আকুলতার কথা মনে থাকবে সকলে ভাল থেকো

ইতি

তােমার দুঃখীনী দিদি

চিঠিটি পড়ে প্রকাশ বাবু কতক্ষণ চুপ করে রইলেন বুঝতে চাইলেন সবই কিছু বুঝলেন কিছু বুঝলেন না মনে মনে ভাবলেন পার্থের কষ্টটা কোথায় বহু ভেবেও ভাবনায় স্থির হতে পারলেন না বুঝতে পারলেন না পার্থকে ভাবতে ভাবতে ভাবনায় পড়ে গেলেন চিন্তিত প্রকাশ বাবু দিন আর কোর্টে গেলেন না

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবন্তি ফিরে দেখল তার বাবা একটি চিঠি হাতে তন্দ্রা মগ্ন অবস্থায় বিছানায় শুয়ে আছে ভাবলাে সুকমলের চিঠি নয়তাে ভেরে চিঠি খানা দেখল বিহারপুরের চিঠি পড়ে কিছুটা স্বস্তি পেল এই ভেবে যে পার্থ তার মায়ের কাছেই আছে কিন্তু তাদেরকে নিয়ে সে আর ততটা ভাবলনা তার ভাবনা একটি জায়গায়ই থেমে গেছে সে সুকমল সুকমল চলে গিয়েছে অনেকদিন হল এসময় অবন্তী চিঠি লিখেছে কিন্তু চিঠির কোন উত্তর আসছে না কেন যে আসছে না ভেবে পাচ্ছে না সে অবন্তির মনে পড়ে সুকমলের সাথে তার কত স্মৃতি পূর্বের স্মৃতি গুলি তাকে আজও দোলা দেয় সেই সাথে ভাবে সামনের দিন গুলির কথা ভবিষ্যৎ ভাবে সে আজ না হয় সুকমল কোন কাজে ব্যস্ত আছে ব্যস্ততা কেটে গেলেই সে তাকে চিঠি লিখবে কেমন আছে সে কবে তার পড়া শেষ হবে কবে তাদের বিয়ে হবে বিয়ের পর অবন্তি সুকমলের সাথে কেমন ব্যবহার করবে লজ্জা পাবে না আগের মতই থাকবে ইত্যাদি ভাবে সে

প্রকাশ বাবুর ঘুম ভেঙ্গে যায় ঘুম থেকে জেগে দেখে অবন্তি ঘরের এক কোণায় বসে কি যেন ভাবছে প্রকাশ বাবু অবন্তিকে বলল শুনেছিস মা পার্থ বাড়ীতে চেলে গেছে তার মার কাছে বেশ ভাল আছে অবন্তি বলল হ্যাঁ চিঠিটা পড়ে জেনেছি ।থাক ভালই হল পার্থ যে বাড়ী চলে গেছে তার মায়ের কাছে চলে গেছে জেনে খুব খুশী হয়েছি ভগবান আমাকে কঠিন ভাবনা থেকে বাঁচিয়েছেন

চলবে......

No comments

Powered by Blogger.