প্রথম প্রেম ❑ সাবরিনা মোয়াজ্জেম ❑ পর্ব_০৮ ❑ শেষ পর্ব
সাবরিনা মোয়াজ্জেম
বনলতা বাড়ি ফিরলে রাহাতের মা বনলতাকে ডেকে আনে। তারপর রাহাতের আসার কথা বলে এবং চীনে যাওয়ার কথাও বলে তারপর চিঠি খানা দিয়ে বিদায় জানায়। বনলতা ঘরে এসেই দরজা বন্ধ করে চিঠি খুলে পড়ে আর কাঁদে। বুকের ভেতর পাথর জমাট অভিমান গলে গলে অশ্রু হয়ে ঝরে। এখন কি করে রাহাতের সাথে যোগাযোগ করবে। কোনো ফোন নাম্বার নেই, নেই কোনো ঠিকানা যে, চিঠি লিখবে! তাই প্রতি রাত চোখের জলে ভাসে,বালিশ ভিজে যায়। এমনি করে হঠাৎ ডাকপিয়নের ডাক, হুড়মুড় করে বনলতা বের হয়ে দেখে রাহাতের চিঠি। চিঠি নয় যেনো আরাধনার আরাধ্য পাওয়া। মন ভরে চিঠি পড়ে ই লিখে ফেলে চিঠির উত্তর। এভাবে চলতে থাকে তাদের চিঠির লেনদেন। কখনো অভিমান, কখনো অভিযোগ কখনো তুমুল ভালোবাসা।
হঠাৎ করেই বনলতার চিঠি আসা বন্ধ হয়ে যায়! দিন গুণে গুণে পনের দিন হয়ে গেলো কিন্ত বনলতার কোনো চিঠি ই আর পাচ্ছেনা। কেননা এমন কোনো দিন নেই বনলতার চিঠি রাহাত পাইনি! কারণ বনলতা প্রতিদিন একটি করে চিঠি পোস্ট করতো তা আসতে আসতে প্রতিদিন একটা করে পেতো। রাহাত সময় অনুযায়ী চিঠির উত্তর দিতে পারতোনা তাই বলে বনলতার চিঠির জন্যে অপেক্ষা করতে হতোনা। বনলতার চিঠি মানে রাহাতের বেঁচে থাকার অবলম্বন। এটা এক মহাঔষধ রাহাতের জন্যে!
কেনো জানি আজ পনের দিন বনলতার চিঠি পাচ্ছেনা রাহাত। তাই চিন্তায় চিন্তায় অস্থির। নিজের বাসায় ফোন করবে, নাকি বনলতার বাসায় ফোন করবে তা ভাবছে। হঠাৎ রাহাতের বন্ধু কাছে এসে বলে, ভাত খেয়েছিস দোস্ত? নাহ। খেয়ে নে। রাহাত খেয়ে নিলো! শোন, জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে সব আল্লাহর হাতে। রাহাতের বুক ধক করে কেঁপে উঠে! তবে কি বিয়ে হয়ে গিয়েছে? এই টুকু হলেও বাঁচা যেতো না রাহাতের জন্যে আরও কঠিন কিছু অপেক্ষা করছে! রাহাতের বন্ধু বলতে লাগলো, বনলতা ও তার মা প্রাইভেট কার যোগে কোথাও যাচ্ছিলো, রেল লাইনের পাতে গাড়ি আটকে যায়,সিগনাল লাইট অফ ছিলো, লাইন ম্যান ছিলোনা ট্রেন মুহূর্তেই চলে আসে তারপর সব শেষ! ড্রাইভার সহ তিনজনই ট্রেনে কাটা পরে। তারপর রাহাতের জ্ঞান ফিরে তিনদিন পর! স্বাভাবিক হতে অনেক সময় লাগে! বিয়ে করে প্রায় বহু বছর পর। কারণ তখনো বনলতার স্মৃতি রাহাতের মনে দগদগে ঘাঁ হয়ে রয়েছিলো! রাহাতের পরিবার এই ঘটনা জানাতে পারতো কিন্তু ছেলে হারানোর ভয়ে এই ঘটনা জানায়নি!
(একটি সত্য ঘটনার ছায়া অবলম্বনে লিখা)
সমাপ্ত
মডেলঃ আমার মেয়ে, ডাক্তার শাহ ফারাহ।


.jpg)


.jpg)
.jpg)
No comments