Header Ads

অবন্তিকা ❑ উপন্যাস ❑ কিশোর পণ্ডিত ❑ পর্ব ০৬



উপন্যাস

ন্তিকা

কিশোর পণ্ডিত

পর্ব_ 

সুকমল লেখাপড়ায় বরাবরই মেধাবী ছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজে সে লেখাপড়া করেছে মেডিকেলের ২য় কি ৩য় বর্ষ থেকে তার সাথে অবন্তিকার প্রেম সুকমলকে ছাড়া অবন্তি বুঝে না কিন্তু সুকমল ৫ম বর্ষে এসে অবন্তিকে ছাড়াও বুঝেছিল সুকমলের ভালবাসায় মাঝে মধ্যে ভেজাল হয় সে এডাল ছেড়ে ডালও ধরে এই নিয়ে অনেক হুলস্হুলের মধ্যে রাধেশ্যাম চৌধুরী সুকমলকে শাসিয়ে অন্য ডাল ছাড়িয়ে ছিলেন কিন্তু অবন্তি তাদের পরিবার ইহা জানত না সুকমল তার বাবাকে বলছিল তারিখে সে বেশী দিন দেশে থাকবে না পড়া শােনার বেশী চাপ আর শেষ পরীক্ষাও আগত প্রায় তাই সে খুব তাড়াতাড়ি লন্ডন চলে যাবে তার বাবা রাগ করে বললেন তাহলে তার আসার কি প্রয়ােজন ছিল সে বলল সিলেটে তার এক বন্ধু এসেছে তার জোরাজোরিতেই সে দেশে এসেছে আগামীকাল সিলেটে যাবে এবং তার বন্ধুকে সাথে নিয়ে বিদেশ চলে যাবে রাধেশ্যাম বাবু বললেন তাহলে এবার তুমি অবন্তিকাদের বাড়ী যাবে না ? তার বাবা মা' সাথে দেখা করবে না ? সুকমল না বলল ছেলের অমতে তার বাবা আর পিড়াপিড়ি করলেন না সে যা বলে তাই হবে আগে তাে পাশ করে আসুক তারপর অবন্তিকাকে ঘরে নিয়ে আসবেন বাবা ছেলের কথপােকথন শেষ হলে যে যার কাজে চলে গেলো। এর মধ্যে অবন্তী ফোন করে ছিল তাদের ওখানে যেতে সুকমল রাজী হয়নি অবন্তি এও বলেছিল তার কাছে আসবে বেড়াতে যাবে কিংবা গল্প করবে এতেও সুকমল না বলে দিল সে বলেছিল সে ব্যস্ত আছে সে হাতে প্রচুর কাজ নিয়ে এসেছে তাই তার সাথে দেখা হবে না অবন্তি তার কথা শুনে কষ্ট পেল ঠিকই কিন্তু তার গুরুত্বপূর্ণ কাজে বাঁধা দিতে চাইল না

সুকমলের যেন এবার দেশে একটুও ভাল লাগছে না মনে মনে স্থির করল পুরনাে বন্ধুদের সাথে দেখা করতে যাবে গল্প করবে দিন কাটিয়ে দিবে আবার কি যেন ভেবে নিজে ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ল পরদিন সকালে ফোন এল ফোনধরে অবন্তি বুঝল এটা সুকমল সে যেন চাঁদ হাতে পেল ফোনে বিশেষভাবে চুমাে খেয়ে অন করল ওপাশ থেকে কথা এল আজ চলে যাচ্ছি ভাল থেকো এই বলে লাইন কেটে দিল অবন্তি কিছুই বুঝল না তার চাঁদ এত মেঘের নিচে ডুবে যাচ্ছে কেন সে আবার ফোন করতে চাইল কিন্তু কিভেবে যেন তা করল না সে চিন্তা করল নিজেই তার কাছে ছুটে যাবে দেখা করবে তার সাথে তারপর দু'জনে মিলে এয়ারপাের্টে গিয়ে তুলে দিয়ে আসবে তাকে সব ঠিক করে হাত মুখ ধুয়ে সকালের নাস্তা সেরে সেজে গোজে চলে গেল সুকমলদের বাড়ী কিন্তু সেখানে গিয়ে তার সাথে দেখা হল না রাধেশ্যাম বাবু বললেন সুকমলতাে বাসে করে এই মাত্র সিলেট চলে গেল তোমাকে সে একথা বলেনি ? উত্তরে অবন্তি বলল না সে কিছু জানে না আচ্ছা মা ,তােমাদের মাঝে কোন মন মালিন্য বা কোন অভিমান চলছে কি ? বললেন রাধেশ্যাম বাবু উত্তরে অবন্তি বলল তেমন কিছুতাে হয়নি তাহলে সুকমল কোথায় গেল তুমি জান না তাও কি হয় কেমন কথা বললেন রাধেশ্যাম বাবু ভাবল অবন্তিও ভাবতে ভাবতে সামনের দিকে অগ্রসর হল বাঁধা দিলেন রাধেশ্যাম বাবু বললেন বাসায় চল অবন্তি আজ আর যাবাে না বলে নিজের বাসায় চলে গেল

বাসায় গিয়ে অবন্তি ভাবতে লাগলাে সুকমলের কি হয়েছে অমন করল কেন ? এবার এসে এক বার ফোন করল মাত্র কোথায় যাচ্ছে কি করছে তাও বলল না ওর হয়েছি কি ? কোথায় কোন ভুল বুঝেনিতাে ? কেমনে সে দুঃখ পেল সে জেনে শুনে তাে সুকমলকে কোন দুঃখ দেয়নি তাহলে এতাে দিন পর সুকমল এলাে তার সাথে ভালভাবে কথাও হয়নি ,আডডা দেওয়া হয় নি ।তাকে আবার খুব দেখতে ইচ্ছে হল অবন্তির সে সিলেট থেকে ফিরে আসবে নাকি ওখান থেকেই চলে যাবে ভাবছিল অবন্তি। সুকমল ফোন করে বলেছিল সে আজ চলে যাচ্ছে সিলেটে যাবে তা তাে বলেনি এমন সময় রিং বাজল ফোন এসেছে ফোন রিসিভ করে অবন্তি বুঝল কমলা কুন্তলা চৌধুরীর গলা বললেন বাসায় এসেছিলে আমার সাথে দেখা না করেই চলে গেলে ? প্রথমেই অবন্তি ক্ষমা চেয়ে নিল বলল, মাসীমা আমার মনটা ভাল নেই তা বুঝি, সুকমলের সাথে দেখা হল না খারাপ তাে লাগবেই আচ্ছা মাসীমা সুকমল কি ঢাকায় আবার আসবে, না ওখান থেকেই চলে যাবে ? না সে আর আসবে না আমার ছেলেকে আমি তাে বুঝি কোথাও একটা কিছু গলদ হয়েছে আচ্ছা মা তুমি তাে জানার কথা তুমি কি কিছুই জাননা ? আমার জানামতে তেমন কিছু হয়নি , আমি কিছু অনুমানও করতে পারছি না। আপনাদের মাঝে কোন ভুলবুঝাবুঝি হয়নি তাে ? না ওর বাবার সাথেও তাে কোন কথা কাটাকাটি হয়নি গত রাত্রে সুকমল ওর বাবার কাছে টাকা চাইল ওনিতাে দিয়ে দিলেন তাহলে হল কি অবন্তি বলল কমলা রানী বললেন ভগবান জানেন বলে ফোন রেখে দিলেন

অবন্তিকে বিভিন্ন চিন্তা , বিভিন্ন স্মৃতি তাড়া করল তার মনে আছে ১৯৯২-৯৩ এর মাঝামাঝি জাতীয় যাদুঘরে কোন এক আর্ট গ্যালারীতে কার যেন চিত্র প্রদর্শনীতে সুকমলের সাথে পরিচয় হয় সেই থেকে জানাশুনা এবং প্রেম বাবু রাধেশ্যাম চৌধুরীর একমাত্র পুত্র সুকমল চৌধুরী অবন্তির বাবা প্রথম থেকেই কেন জানি প্রেমে আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন ,কিন্তু মেয়ের মঙ্গলের কথা ভেবে আর বাঁধা দেননি তারপর থেকে তারা দুজন একে অন্যের বাসায় অবাধে গিয়েছে লজ্জা কেটে গেছে দুই পরিবার মেনেই নিয়েছিলেন তাদের বিয়ে হবে এটাও নিশ্চিত ছিলেন সবাই অবন্তির মনে আছে সে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম বর্ষের ছাত্রী তখন সুকমল ঢাকা মেডিকেল কলেজের ৩য় বর্ষের ছাত্র কত ক্লাস ফাঁকি দিয়ে তারা এখানে ওখানে আডডা দিয়েছে চুটিয়ে প্রেম করেছে তার মনে আছে একদিন ভরা আষাঢ়ের বৃষ্টিতে দুজনে সংসদভবন চত্তরে ভিজে ভিজে অনেক সময় গল্প করেছিল তাতে তার কিছু হয়নি কিন্তু সুকমলের ভীষণ ঠান্ডা লেগেছিল কেশেছিল অনেকদিন কিন্তু কেন এমন হয়েছিল সে ছাড়া কেউ জানত না আরেকদিন বােটানিকেল গার্ডেনে চানাচুরওয়ালার সঙ্গে কি কান্ডই না ঘটেছিল কথা মনে হলে এখানাে হাসি পায় চানাচুরওয়ালার পোশাক পরে কেমন নেচেছিল সুকমল তাদের সাথে কোন কারণে একদিন দেখা না হলে পরদিন সকালেই তাদের বাসায় চলে যেত সুকমল আজ তার কি হল এমন ভাবে পালিয়ে গেল সে অবন্তির কাঁদতে ইচ্ছে হল কিন্তু পরক্ষনেই ভাবল হয়তাে তার কোন কাজে অভিমান করছে সুকমল সব ঠিক হয়ে যাবে ভাবল সে তাই যেন হয় সিলেটের ঠিকানা জানা নেই নিরুদ্দেশ ঠিকানার কথা ভাবতে ভাবতে অবন্তী সুকমলের পথের দিকে চেয়ে রইল

১৯ শে আষাঢ় মঙ্গলবার গভীর অন্ধকার রাধেশ্যাম বাবুর স্ত্রীর ভীষণ অসুখ করেছে পারিবারিক ডাক্তার পরামর্শ দিলেন এখনই যে কোন হাসপাতালে নিতে হবে অনেক কষ্টে এম্বোলেন্স যােগাড় করে অবশেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হল কমলা কুন্তলা চৌধুরীকে কিন্তু বিধি বাম হল এক রােগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে হাসপাতাল যেন অচল হয়েছে ডাক্তার এবং রােগীনীর পরিবারের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনায় ডাক্তাররা ধর্মঘট ডেকেছে এখন কোন উপায়ান্তর না দেখে রােগীনীকে প্রাইভেট হাসপাতালে নেওয়া হল রাধেশ্যাম বাবুর সকল আত্মীয়দের খবর দেওয়া হল প্রকাশ বাবুদের খবর দেওয়া হল বাইরে বৃষ্টি পড়ছে তা উপেক্ষা করে অবন্তী এবং তার বাবা হাসপাতালে উপস্থিত হল অবন্তিই রাতে একমাত্র নারী সে সারারাত ধরে ভাবী শাশুড়ীর সেবা করতে লাগল সকালে কমলার জ্ঞান ফিরল সকলের চিন্তা দুর হল কমলা রানী যাত্রায় বেঁচে গেলেন রাধেশ্যাম বাবু অমন গুণী মেয়ের গল্প গর্ব করে সবাইকে আরেকবার শুনালেন কমলা রানী শুনলেন ভাবলেন অমন মেয়েই তারা চেয়েছেন ভগবান যেন তাদের আশা পূরণ করেন দিন হাসপাতালে সবাইকে কাটাতে হল চাইলে আগেই কমলাকে নিয়ে যেতে পারতেন তবে ডাক্তারদের উপদেশে তাদের এতদিন ওখানে থাকতে হল সাতদিন পর লন্ডন থেকে সুকমলের ফোন আসল রাধেশ্যাম বাবু ফোন ধরলেন সুকমল একে একে সবার কথা জিজ্ঞাসা করল কে কেমন আছে তা জানতে চাইল কিন্তু অবন্তি কেমন আছে তা একবার ভুলক্রমেও বলল না মায়ের সাথে কথা বলতে চাইল কমলা রানী ফোন ধরলেন তার কঠিন অসুখ হয়েছিল তা জানাল অবন্তি সেবা করেছে তা বলতেই অত কষ্টের লাইন কেটে গেল যাহােক তাদের ছেলে লন্ডন পৌঁছেছে সে ভাল আছে কথা জেনে চৌধুরী দম্পতি খুশী হলেন কিন্তু অবন্তির কথা জানতে চাইল না ভেবে কষ্ট পেলেন কমলা কুন্তলা চৌধুরী এবং রাধেশ্যাম চৌধুরী ঠিক করলেন অবন্তীর সাথে সুকমলের এখনি বিয়ে দিয়ে দেবেন তাদের তর সইল না তাই তারা পরের সপ্তাহেই সুকমলকে ফোন করে জানিয়ে দিল যে যত দ্রুত সম্ভব সুকমল যেন দেশে ফিরে এখনি তারা তার বিয়ে দিতে চায় বিয়ের পর আবার পড়াশােনা করা যাবে সুকমল সব শুনল কিন্তু ফোনে হ্যাঁ বা না কিছুই বলল না সব শুনে ফোন রেখে দিল

চলবে.....


No comments

Powered by Blogger.