কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিবসে বিনম্র শ্রদ্ধান্জলী
কবি
কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিবসে বিনম্র শ্রদ্ধান্জলী
❑
“আমায়
নহে গো ভালোবাসো
শুধু
ভালোবাসো মোর গান
বনের
পাখিরে কে চিনে রাখে
গান
হলে অবসান “!
আজ
আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২২ তম জন্মদিবসে ছন্দ কবিতা কাব্য
গ্রুপের পক্ষ হতে কবির প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধান্জলী।
কবি
কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ১৮৯৯ সালের ২৫ শে মে, পশ্চিম বঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোলের
চুরুলিয়া গ্রামে। কবির পিতার নাম কাজী ফকির আহমদ এবং মাতার নাম জাহেদা খাতুন।নজরুলের
বাবা কাজী ফকির আহমদ ছিলেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম।
কাজী
নজরুল ইসলাম এক দরিদ্র মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। নজরুলের আরেক নাম ছিল দুখুমিয়া।
তিনি মসজিদে মুয়াজ্জ্বিনের কাজ করতেন । মক্তবে তিনি কোরআন, দর্শন, ইসলামী ধর্মীয় তত্ব
নিয়ে অধ্যয়ন শুরু করেন এবং এক সময়ে ঐ মক্তবেই শিক্ষকতা করেন। ১৯০৮ সালে মাত্র নয় বছর
বয়সে বালক নজরুল পিতৃহারা হলে সংসারের ভার নিজের কাঁধে তুলে নেন। আর্থিক অনটনে নিম্ন
মাধ্যমিক শেষ করেই শিক্ষকতা শুরু করেন । মুয়াজ্জিনের কাজ করে প্রথম আয় হতে সংসারের
কাজে ব্যয় করেন। এছাড়া একটি রুটির দোকানে ও বালক নজরুল কাজ করেছিলেন ।
অসাধারণ
প্রতিভার অধিকারী নজরুলের জীবন দারিদ্রতা দুমড়ে দিতে পারেনি। তিনিই বাংলা সাহিত্যে
প্রথম ইসলামি চেতনার চর্চা শুরু করেন বলা হয়ে থাকে। তিনি লেটো দলে যোগ দিলেন লেটো দল
ছিল বাংলার রাঢ় অঞ্চলের কবিতা গান ও নৃত্যের আংগীকে গঠিত নাট্যদল। এভাবেই তিনি বাংলা
সাহিত্য চর্চা শুরু করেন। তিনি এক সময়ে হিন্দু ধর্মের পুরাণ সমূহ অধ্যয়ন শুরু করেন।
ইসলামী গান ও গজলের পাশাপাশি নজরুল প্রচুর শ্যামা সংগীত রচনা করেছিলেন। নজরুল ছিলেন
অসাম্প্রদায়িক কবি। তিনি মানুষকে মানুষ হিসাবে মূল্যায়ন করতেন। তাঁর লেখনীতে সমাজের
বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে। তিনি ছিলেন মানবতার কবি, সাম্যের কবি, প্রেমের কবি , বিদ্রোহী
কবি।
কবি
বলেছিলেন, গাহি সাম্যের গান, মানুষের চেয়ে নহে কিছু বড় নাই কিছু মহীয়ান।
কবি
নজরুলের মানস চেতনা ছিল প্রগতিশীল । নিন্দুকেরা তাঁকে অনেক কিছু বললে ও কবি বলেছেন,
আমি হিন্দুদেরকে তাদের জায়গা হতে মুসলমানদেরকে তাদের জায়গা হতে এনে হাত মিলানোর চেষ্টা
করেছি, গালাগালিকে গলাগলিতে পরিণত করার চেষ্টা করেছি”।
১৯২১
সালে নজরুলের বিদ্রোহী ও ভাঙার গান কবিতা তখনকার সাহিত্য জগতে নতুন চেতনার সূচনা করে।
ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে কলম ধরে কবি কারাবরণ করেছিলেন।জেলে বসেই জ্বালাময়ী কবিতা লিখে
স্বাধীনতাকামী ভারতবাসীর মনে আশা জাগিয়েছিলেন। তিনি সৈনিক হিসাবে ও যোগ দিয়েছিলেন এবং
কর্মক্ষেত্র হিসাবে এক সময় করাচীতে কাটিয়েছিলেন । কবির রাজবন্দীর জবানবন্দীতে কবি ও
কবিতার সত্তার স্বরুপ তুলে ধরেছিলেন। অসংখ্য গান ,কবিতা ,কবিতা, গল্প , উপন্যাস , নাটক
লিখে কবি বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। তিনি বাংলা ভাষার পাশাপাশি আরবী ফারসী উর্দু
, ইংরেজী বিভিন্ন ভাষার শব্দ বাংলা সাহিত্যে ব্যবহার করেছিলেন ।
কবির
সৃষ্টির মধ্যে অগ্নিবীনা, বিষের বাঁশি, দোলনচাঁপা, বাউন্ডুলের আত্মকাহিনী, হেনা, ব্যাথার
দান, চক্রবাক,বাঁধন হারা , ধুমকেতু, ঘুমের ঘোরে, শিউলিমালা সহ অসংখ্য গল্প , কাব্য
উপন্যাস , নাটক রচনা করেছিলেন।কবির খুকি ও কাঠবেড়ালী, ঝিঙেফুল, লিচু চোর, মানুষ, নারী
, বিদ্রোহী, বাতায়ন পাশে গুবাক তরুর সারি সহ অসংখ্য কবিতা বিখ্যাত।
ব্যক্তিগত
জীবনে কবির সহধর্মিনী ছিলেন প্রমীলা দেবী। প্রথম স্ত্রী নার্গিসের সাথে বিবাহ সম্পন্ন
হবার পরপরই ঘরজামাই থাকার শর্ত জুড়ে দেওয়ায় বিচ্ছেদ ঘঠেছিল। কিন্তু নজরুল নার্গিসকে
ভালোবেসে অনেক গান কবিতা উপহার দিয়েছিলেন। কবির জীবনে প্রেম এসেছিল অনেকবার। ফজিলতুন্নেসা
নামে আরেকজন নারী এসেছিলেন কবির জীবনে। নজরুল হলেন বাংলার বুলবুল কবি।২২ বছরের সংক্ষিপ্ত
সাহিত্য জীবনে তিনি বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছিলেন। এজন্য কবিকে বাংলা সাহিত্যের
যুগস্রষ্টা বলা হয়। ১৯৪১ সালের ৫ ও ৬ এপ্রিল কলকাতা মুসলিম ইনস্টিটিউট হলের রজত জয়ন্তীতে
সভাপতি হিসাবে শেষ ভাষণে বলেছিলেন , আর যদি বাঁশি না বাজে ....””! কেউ হয়তো সেদিন বুঝতে
পারেননি কবি দীর্ঘদিনের জন্য দূরারোগ্যে পতিত হবেন। এরপর কবি আর সাহিত্য চর্চা করতে
পারেননি। দীর্ঘ ৩৪ বছর বাকশক্তিহীন পঙ্গু অবস্থায় ১৯৭৬ সালের ২৯ শে আগষ্ট সকালে কবি
চিরদিনের মত না ফেরার দেশে চলে যান। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহির রাজিউন । কবির
শেষ ইচ্ছেমত তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের পাশে শায়িত করা হয়। কবি লিখেছিলেন,
মসজিদের ই পাশে আমার কবর দিও হায়, যেন ঐ গোরে থেকে মুয়াজ্জ্বিনের আযান শুনতে পাই”।
১৯৭২
সালে ২৪ শে মে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ইচ্ছেয় কবিকে ঢাকায় বিমানযোগে আনা হয়
এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। কবি নজরুল ভারত, বাংলাদেশ ও ব্রিটিশ ভারতীয় নাগরিকত্ব
লাভ করেছিলেন। তিনি জগত্তারিণী স্বর্ণপদক ১৯৪৫ সালে, স্বাধীনতা পদক পুরষ্কার ১৯৭৭ সালে
, একুশে পদক ১৯৭৬ সালে , পদ্মভূষণ সহ অনেক পুরষ্কার পেয়েছিলেন।
কবি
কাজী নজরুল ইসলাম একজন সত্যিকারের মানবতার কবি। তিনি বেঁচে থাকবেন আজীবন বাংগালির মনে।
কবির ভাষায় , আমি চিরতরে দূরে চলে যাব তবু আমাকে দেবনা ভুলিতে”.... আমরা কবিকে ভুলিতে
পারিনা পারবনা। মহান রাব্বুল আলামীনের কাছে প্রার্থনা করি কবিকে জান্নাত নসীব করুন,
আমীন।
কবির
জন্মদিনে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা
শামছুন
ফৌজিয়া
এডমিন
ছককা
এডমিন প্যানেল
No comments