একটি অপেক্ষমান ভালোবাসার চিঠি
একটি
অপেক্ষমান ভালোবাসার চিঠি
কামরুল
ইসলাম শিমুল
❑
প্রিয়
নিলা,
খুব সাহস করে আজ ভালো লাগার অনুভূতিটুকু প্রকাশ করে দিলাম। ভাবতেই পারিনি এতো সহজে বলতে পারবো? এতোদিন “তোমাকে আমার ভালো লাগে” কেবল এই কথাটি কিভাবে বলবো তার উপায় খুঁজে পাইনি। প্রথম ভালো লাগার মানুষটিকে মনের কথাটি বলে নিজেকে আজ খুবই স্বার্থক মনে হচ্ছে। কত রাত তোমাকে নিয়ে মনে মনে স্বপ্নের বাসর সাজিয়েছি, কিন্তু তুমি তা বুঝোনি।
না তোমাকে দোষ দেব না হয়তো আমিই বুঝাতে পরিনি। ব্যর্থতা আমার তোমার নয়। একটা সময় খুব কাছে ছিলাম তোমার, এক সাথে পথও চলেছি অনেক। কিন্তু মনের কথা মনেই জমা ছিল। মাঝে মাঝে প্রশ্ন জাগে ভালোবাসা আর যোগ্যতা বিপরীত কেন? তবে কী এটাই সত্য যে, যখন ভালোবাসা সৃষ্টি হয় তখন যোগ্যতা থাকে না আবার যখন যোগ্যতা অর্জিত হয় তখন ভালোবাসা থাকে না। এত দিন নিজের অযোগ্যতার কারনে মনের কথা বলতে সাহস পাইনি, এই ভেবে যে, যদি তুমি আমার ভালোবাসা গ্রহণ না করো? যদি আমাকে ভুল বুঝো? যদি আমাকে ফিরিয়ে দাও? ইত্যাদি ইত্যাদি...............। বর্ষার সার্থকতা সে ঝরতে পারে, কাঁদতে পারে। ঝরে গিয়ে কেঁদে কেঁদে সে তার মনের অব্যক্ত কথা প্রকৃতিকে রিমিঝিমি শব্দে শোনাতে পারে। কালো মেঘের আবরণে তার যত কষ্টের দাগ লেগে আছে সবটুকু সে অঝোর ধারায় প্রকৃতির মাঝে বিলিয়ে দিতে পারে। এই পারাটাই তার সুখ, তার সার্থকতা। কিন্তু আমি তো বর্ষার মতো কাঁদতে পারি না! আমি যা পারি তা হলো, গভীর রাতে নিজের দুঃখ- যাতনার স্মৃতি রোমন্থনে দু'চোখের পানি দিয়ে বালিশ ভেজাতে। আমার এই বালিশ ভেজা চাপা কান্না কেউ দেখে না। কেউ শোনে না আমার হৃদয়ের আর্তনাদ। শুনেছি বিশ্বাসে মেলায় বস্তু। সেই বিশ্বাসের উপর ভর করে আমি তোমাকে আপন ভেবে নিজের দুঃখ-কষ্টকে তোমার সাথে শেয়ার করতে চাইতাম, কিন্তু পারিনি কারণ আমি যে একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী! কোন সুস্থ সবল ব্যক্তি কি চায় তার জীবন কোন প্রতিবন্ধীর সাথে জড়াক? চায় না। এই ভেবে আর বলা হতো। জানো, একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও নিজের জীবনটাকে সুন্দরভাবে সাজানোর স্বপ্ন কখনো দেখিনি যে তা নয়। আমার ভাঙ্গা মনটাতেও খুব ইচ্ছে জাগে ভালোবাসার স্বাদ পেতে। একটু ভালোবাসা পেলে আমিও যে রচনা করতে পারতাম বিশ্বের মহা কবিদের অপরিচিত সংগীতমালা। অন্তর মাধুরী দিয়ে দূর করতে পারতাম মনে সকল পুঞ্জিভূত কুয়াশা। মহা শুন্যের বুকে উড়িয়ে দিতাম শান্তির পায়রা। নতুন সৃষ্টির গানে হতাম সোচ্চার প্রতিদিন চিরদিন। হয়তো তোমার একটু ভালোবাসা পেলে আমার এই ভাঙ্গা জীবনটাকে সুন্দর করে সাজাতে পারবো? মাঝে মাঝে ভাবতাম আসলেই কি তোমার মন বুঝতে পারতো একজন প্রতিবন্ধীর জীবনে কি পরিমাণ কষ্ট আছে? আমার কাছে তা জানা ছিলনা, তাই বারবার মনের কথা বলতে গিয়েও বলতে পারিনি। কারণ আমি যে ...........! আমাকে কেবল করুণা করা যায়, ভাই-বন্ধু ভাবা যায়, ভালোবাসা যায় না। ভালোবাসাতো পূর্ণতায় ভরা। অপূর্ণ জীবনে ওসব একেবারে বেমানান। এতগুলো ভাবনার মাঝে আঠারোটি বছর পার হয়ে গেল। আঠারো বছর পর আজ তোমাকে মনের কথা জানালাম। জানি, এই জানানোটুকু নিষ্ফল আবেদনের মতোই। কারণ তেমার আর আমার পথ আজ দুটি দিকে চলমান। তবু সান্তনা যে, আঠারো বছর পরে হলেও আমার ভালো লাগার কথাটুকু বলতে পেরেছি। মনে আছে তোমার তোমাকে লেখালেখি করার জন্য খুব পীড়া দিতাম। এরো একটা কারণ ছিল, যদি আমাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পেত তবে, প্রতিটি রাতকে আমরা অন্য ভাবে সাজাতাম। তুমি আমাকে চিঠি লিখতে আর আমি লিখতাম তোমাকে যা পড়ে পড়ে আমাদের রাত কাটতো। অনেক কথা বলে তোমার মূল্যবান সময় অপচয় করলাম। পারলে ক্ষমা করে দিও। ভালো থেকো সারা জীবন।
❑
ইতি হিমেল।
No comments