Header Ads

প্রিয় নবী (সঃ) কিংবা উম্মাহাতুল মুমিনীনদের শানে বেয়াদবীর পরিণতি:


প্রিয় নবী (সঃ) কিংবা উম্মাহাতুল মুমিনীনদের শানে বেয়াদবীর পরিণতি:

মুহাম্মদ ইরফান আহম্মেদ ভূঁইয়া

আম্মাজান খাদিজাতুল কুবরা সালামুল্লাহি আলাইহা দুইবার তালাক খাওয়া বুড়ি ছিলেন না বরং উনার ১ম স্বামী মারা যাওয়ার পর দ্বিতীয় স্বামী এবং দ্বিতীয় স্বামী মারা যাওয়ার আমাদের প্রিয় নবী (সঃ) এঁর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। আরো উল্লেখ্য যে, উনার ২য় স্বামী অনেক ধনাঢ্য ছিলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারসূত্রে তিনি অনেক সম্পত্তি লাভ করেন।

সূরা আহযাবের নং আয়াত "নবী ((সঃ)) মুমিনদের নিকট তাদের প্রাণ অপেক্ষাও অধিক প্রিয়/ নিকটবর্তী এবং তাঁর স্ত্রীগণ তাদের মা-স্বরূপ।" এর প্রসঙ্গে তাফসীরে জালালাইনের হাশিয়াতে উল্লেখিত হয়েছে,

আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, নবীজী (সঃ) এঁর পুণ্যবতী বিবিগণের (রা) মধ্যে কারোপ্রতি সামান্যতম বেআদবী অশিষ্টাচারও এজন্য হারাম যে, তারা উম্মতের মা উপরন্তু তাদেরকে দুঃখ দিলে নবীজী (সঃ) কে দুঃখ দেওয়া হয়, যা চরমভাবে হারাম।

আমার আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা বলেন,

নিশ্চয় যারা কষ্ট দেয় আল্লাহ তাঁর রাসূলকে, তাদের উপর আল্লাহর লানত (অভিসম্পাত) দুনিয়া আখিরাতে এবং আল্লাহ তাদের জন্য লাঞ্চনার শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন।

_ (সূরা আহযাবঃ ৫৭)

ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা নবীর আওয়াজের উপর তোমাদের আওয়াজ উচ্চ করো না। তোমরা নিজেরা পরস্পরে যেমন উচ্চ আওয়াজে কথা বল, তাঁর সঙ্গে সে রকম উচ্চ আওয়াজে কথা বলো না। তা করলে তোমাদের (যাবতীয়) আমল নিস্ফল হয়ে যাবে, আর তোমরা একটু টেরও পাবে না।

_(সূরা হুজরাতঃ )

উক্ত আয়াতের তাফসীরে উলামায়ে কেরাম বলেন, প্রিয় নবী (সঃ) কষ্ট দেয়া, তার শানে বেয়াদবী করা কুফর যার কারণে সমস্ত আমল বিনষ্ট হয়ে যায়। অথচ ঐসব তথাকথিত লাগামহীন বক্তাদের অবস্থা কেমন..!

সূরা হুজরাতের নং আয়াত নাজিলের পর  উমর (রাঃ) যখন নবী (সঃ) এঁর সঙ্গে কোন কথা বলতেন, তখন (আওয়াজ উচ্চ হয়ে যাওয়ার ভয়ে) গোপন বিষয়ের আলাপকারীর মত চুপে চুপে বলতেন, এমন কি তা শোনা যেত না যতক্ষণ না নবী (সঃ) তাকে আবার জিজ্ঞেস করতেন। (সহিহ বুখারী ৭৩০২)

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) একদা নবী (সঃ) সাবিত ইবনু কায়স (রাঃ) কে খুঁজে পেলেন না। একজন সহাবী বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সঃ)! আমি আপনার কাছে তাঁর সংবাদ নিয়ে আসছি। তারপর লোকটি তাঁর কাছে গিয়ে দেখলেন যে, তিনি তাঁর ঘরে মাথা নীচু করে বসে আছেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আপনার কী অবস্থা? তিনি বললেন, অত্যন্ত খারাপ। কারণ (এই অধম), তার আওয়াজ (স্বর) নবী (সঃ) এঁর আওয়াজ হতে উচ্চ হয়েছিল। ফলে, তার আমল বরবাদ হয়ে গেছে এবং সে জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। [এগুলো তিনি আশংকার কারণে বলছিলেন কেননা জন্মগতভাবেই তাঁর আওয়াজ উচ্চ ছিল। আর তিনি হলেন সেই ব্যক্তি যাঁকে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এঁর খতীব হলা হত। আহ! ইনাদের কেমন আল্লাহভীতি এবং প্রিয় নবী (সঃ) এঁর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ছিল!]

তারপর সাহাবী নবী (সঃ) এঁর কাছে ফিরে এসে খবর দিলেন যে, তিনি এমন এমন কথা বলছেন। মূসা ইবনু আনাস রহঃ বলেন, এরপর সাহাবী এক মহা সুসংবাদ নিয়ে তাঁর কাছে ফিরে গেলেন (এবং বললেন) নবী (সঃ) আমাকে বলেছেন, তুমি যাও এবং তাকে বল, তুমি জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত নও বরং তুমি জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত। (সহিহ বুখারী ৪৮৪৬)

সূরা হুজরাতের - নং আয়াতের তাফসীরে, তাফসীরে জালালাইনের হাশিয়াতে উল্লেখ রয়েছে, বস্তুত ইসলামের মহা নিদর্শনাবলি চারটি। যথাঃ . কুরআনুল কারীম, . নবী করীম (সঃ), . বায়তুল্লাহ (কাবা শরীফ) . নামাজ। এগুলোর প্রতি তারাই সম্মান প্রদর্শন করবে, যাদের অন্তরে পূর্ণমাত্রায় খোদাভীতি বিদ্যামান। আরো উল্লেখ করা হয়েছে,

রাসূল (সঃ) এঁর প্রতি আদব প্রদর্শন তাকওয়া (আল্লাহভীতি) পরস্পর ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যাদের অন্তরে যত বেশি খোদাভীতি রয়েছে তারা নবী করীম (সঃ) এঁর প্রতি ততবেশি আদব প্রদর্শন করবে, তাঁকে ভালবাসবে, তাঁর অনুগত থাকবে। পক্ষান্তরে যাদের অন্তরে খোদাভীতির বালাই নেই তারা যে, নবী করীম (সঃ) এঁর প্রতি শুধু অশ্রদ্ধাই পোষণ করবে তা- নয়, তাঁকে অপমানিত করতেও কুন্ঠিত হবে না। নবী করীম (সঃ) এঁর সাথে বেয়াদবী করা অন্তরে খোদাভীতির অনুপস্থিতিকেই প্রমাণিত করে, যা মূলত কুফরীরই লক্ষণ।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা বলেন, "আর যে কেউ আল্লাহর নিদর্শনগুলোকে সম্মান করবে সে তো তার অন্তরস্থিত আল্লাহ-ভীতি থেকেই তা করবে।" (সূরা হজ্জ্ব, আয়াত ৩২)

প্রিয় নবী (সঃ) এঁর শানে বেয়াদবী সহ্য করা সাহাবায়ে কেরামের কাছে খুবই কষ্টের ছিল। বুখারী মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে, একবার গনিমতের মাল বন্টনকালে এক মুনাফিক প্রিয় নবী (সঃ) এঁর শানে বেয়াদবী করলে হযরত উমার রাঃ এবং খালিদ বিন ওয়ালিদ রাঃ তার গর্দান উড়িয়ে নিতে অনুমতি প্রার্থনা করেন। তখন প্রিয় নবী (সঃ) জানিয়ে দেন যে, মুনাফিকের বংশ থেকে এমন এক জাতির উদ্ভব ঘটবে যারা শ্রুতিমধুর কন্ঠে আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করবে অথচ আল্লাহর বাণী তাদের গলদেশের নিচে নামবেনা। তোমরা তাদের নামাজের তুলনায় নিজের নামাজ এবং রোজা নগণ্য বলে মনে করবে। তারা দ্বীন থেকে এভাবে বেরিয়ে যাবে যেভাবে নিক্ষেপকৃত জন্তুর দেহ থেকে তীর বেরিয়ে যায়।

অন্যদিকে জনৈক অন্ধ সাহাবীর এক ক্রীতদাসী ছিলো। দাসী নবী (সঃ) কে গালি দিতো এবং তাঁর সম্পর্কে মন্দ কথা বলতো। অন্ধ সাহাবী তাকে নিষেধ করা সত্ত্বেও সে বিরত হতো না। সে তাকে ভৎর্সনা করতো; কিন্তু তাতেও সে বিরত হতো না। এক রাতে সে যখন নবী (সঃ) কে গালি দিতে শুরু করলো এবং তাঁর সম্পর্কে মন্দ কথা বলতে লাগলো, তিনি একটি একটি ধারালো ছোরা নিয়ে তার পেটে ঢুকিয়ে তাতে চাপ দিয়ে তাকে হত্যা করলো। (অতঃপর নবী (সঃ) তার হত্যা ক্ষমা করে দিলেন) [সুনান আবূ দাঊদ ৪৩৬১, ৪৩৬২, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৫০]

 

 

No comments

Powered by Blogger.