একটি স্বপ্নভাঙ্গা রাত _ আব্দুল্লাহ জিয়াদ
একটি
স্বপ্নভাঙ্গা রাত
আব্দুল্লাহ
জিয়াদ
❑
কি
মুছিবতে পড়লাম রে বাবা, সুদীর্ঘ লালিত স্বপ্ন গুলো কি এভাবে মাঠে মারা যাবে? কথাগুলো
মনে মনে আওরাচ্ছিল রুবিনা! কারণ আজ তার বাসর রাত। আশা ছিল সারাটা রাত গল্প গুজবে কাটাবে,
দাদীর শিখে দেয়া বাসর রাতের বিড়ালটা মারা হবে। সংসার জীবনের প্লানটা আজ রাতেই সেরে
নেয়া হবে। কিন্তু সে সব আর হচ্ছে কই, তার আশায় গুড়ে বালি! নির্ঝরের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে
গেল যে!
হারাধনের
স্বপ্নে পাওয়া বাছাধন, প্রাণ প্রিয় দেবনাথ সাঁঝ রাতেই ঘুমিয়ে পড়েছে। তাও সমস্যা ছিল
না, কিন্তু এ কি নাক ডাকারে বাবা! ঘর ঘর ঘর ঘরাৎ...! রুপমের বিশ্রি নাক ডাকার শব্দে
রুবিনা'র খেই হারিয়ে ফেলার উপক্রম। সে আপাদমস্তক কিংকর্তব্যবিমুঢ়! রাজ্যের যত বিষন্নতা
তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে! তার ইচ্ছে করছে একটা ঘুষি দিয়ে রুপমের নাকটা ফাটিয়ে দেই।
বিজ্ঞান
বইতে পড়েছিলাম; শ্বাসনালী সরু হয়ে গেলে বা শ্বাস ঝিল্লিতে চর্বি জমলে বা নাসারন্ধ্র
পথে পলিপ তৈরি হলে প্রশ্বাসের সময় যে কম্পন তৈরি হয় সেজন্য নাক ডাকে।তাহলে এই হাঁদারাম
এতকাল চিকিৎসা করায়নি কেন? ওর পাপের প্রায়শ্চিত্ত কি এখন আমাকে ভোগ করতে হবে? রুবিনা
ভাবনার সাগরে ভাসতে থাকে আর নয়ছয় সাতসতেরো ভাবতে থাকে।
এখন
রাত এক টা বাজে, নাক ডাকার শব্দটা আগের চেয়ে আরো বেড়ে গেছে। সে এর জন্য কাকে দায়ী করবে
বুঝতে পারে না। তাহলে কি তার কপালটাই খারাপ? না বাবা এভাবে সংসার করার চেয়ে সন্ন্যাসীনি
হয়ে পথে পথে ঘোরা অনেক ভাল!
রুবিনা
ভাবছে; বান্ধবীদের ফোন করে তার এই দূর্দশা জানিয়ে দেই। কিন্তু না, হাজার হলেও সে তার
কপালের সাথে গেঁথে গেছে! এই উজবুক'টার নিদ্রা ভঙ্গের কারণ হওয়া তার উচিত হবে না।
রুবিনা
ভেবেই চলছে, কিন্তু কূলকিনারা পাচ্ছে না। অনেকটা "ভিক্ষা চাইনা মা কুত্তা ঠেকাও"
অবস্থা। গল্প গুজব নাই বা হলো, অন্ততঃ নাক ডাকা'টা বন্ধ হলে তো একটু শান্তিতে ঘুমানো
যেতো।
সময়
আর কাটছে না, উদ্বিগ্নতা ও বিষন্নতা বেড়েই চলছে! সে খাট থেকে নেমে সোফায় গিয়ে ঘুমানোর
ব্যর্থ চেষ্টা করলো, ঘুমতো আসছে না! কিভাবে আসবে, নাক ডাকার শব্দটা সেখানেও আসছে তীব্র
বেগে। আকাশ পানে চেয়ে চেয়ে সে ভাবতে থাকে, সকালটা হোক রুপমের সাথে শেষ বোঝাপড়া'টা আজই
হবে।।
No comments