শত্রুবর _ শামছুন ফৌজিয়া
শত্রুবর
শামছুন
ফৌজিয়া
❑
“তোমরা নিশির খুব ভালো বন্ধু, সব সময় তোমরা
কানেক্টেড থাকো তাই আমি জানতে চাইছি আমার মেয়ের কি হয়েছে তোমরা কেউ জানো “?
কথাগুলো
বলে সবার মুখের দিকে তাকালেন নিশির বাবা দবির উদ্দিন। তিনি সরাসরি ভার্সিটির
হোস্টেলে চলে এসেছেন নিশির বন্ধুদের সাথে কথা বলতে।অর্ক, তূর্য, শেরাম, বিল্লাল
সবাই একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে বলল, কি হয়েছে আংকেল একটু খুলে বলুন”!
দবির
উদ্দিন বললেন, নিশি সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিয়ে করবে আর সেটা ঐ যে পাড়ার মাস্তান টাইপ
ছেলে পল্টুকে!!
সবাই
বলে উঠল, কি বলেন আংকেল! এ কি করে সম্ভব?
দেখ
বাবারা ওঁর বিয়েটা ভেংগে গেল পাত্রপক্ষের জন্য এরপর সে এই সিদ্ধান্ত নিল তাই
বলছিলাম তোমাদের সাথে এ ব্যাপারে কোন আলাপ হয়েছে?
শেরাম
বলল, মনে পড়েছে আংকেল বলছিল বিদেশি পাত্রের মা নাকি নিশির গাঁয়ের রং ফর্সা নয়,
আরেকটু লম্বা মেয়ে চান বলে বিয়ে ভেংগে দিলেন!
হ্যাঁ
বাবারা, ঐ ভদ্রমহিলা নিজের বোনের মেয়েকে বউ করতে গিয়ে এই কাণ্ড করেছেন। তাই বলে
নিশি পল্টুকে বিয়ে করতে পারেনা। পল্টু এসএসসি শেষ করে পার্টি করে, চাঁদাবাজি করে!
জেনেশুনে কেউ এমন ছেলেকে বিয়ে করবে?
আংকেল
তিয়াসের সাথে নিশির তো প্রায়ই কথা কাটাকাটি হয়, সেদিন ও হয়েছিল...
এই
তিয়াস আর নিশি সব সময় ঝগড়া করে, একজন ডানে গেলে আরেকজন বামে যাবেই বলল বিল্লাল।
দবির
উদ্দিন বললেন, সেটা আর নতুন কি বাবারা! ঝগড়া শেষে আবার তো মিল ও হয়ে যায় ওদের।
আমি পারুলের কাছ থেকে এ রকম কিছুর আভাস পেয়েছি, এখন বলো তিয়াসের সাথে কি হয়েছিল?
তূর্য
বলল, আংকেল আমরা দেখছি, ঐদিন তিয়াস ও ব্যাঙ্গ করে বলেছিল নিশিকে কোন ছেলেই পছন্দ
করবেনা! সারাজীবন আইবুড়ো হয়ে থাকতে হবে! এটা আসলে মজা করে ওঁকে রাগানোর জন্য
বলেছিল!
বাবারা
আমি গেলাম, এখন রাত ন’টা বাজে । কাল সকাল দশটায় পল্টুকে সে কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে
করে ফেলবে ।
দবির
উদ্দিন চলে যাবার পর সবাই নিশির ফোনে কল দিচ্ছিল সেটা অফ দেখায়! ওদিকে তিয়াসকে ও
পাওয়া গেলোনা। এটা কি করে হয় পল্টুকে কেন বিয়ে করবে নিশি? নিশ্চয় তিয়াসের কথার
বদলা নিতে । এত জেদী মেয়ে নিশি!! সারা রাত খুঁজে ও তিয়াসের খবর মিললনা । শেষ
পর্যন্ত ভোররাতে তিয়াসকে পাওয়া গেল নিপুর গ্রামের বাড়িতে।
অর্ক
আর বিল্লাল তিয়াসকে একরকম ঘাড় ধরেই নিয়ে এল ঢাকায়। ওরা সবাই ঢাকা ভার্সিটির ছাত্র
। সবকিছু শুনে তিয়াস বলল, কি বলছিস এসব? আমি তো নিশিকে রাগানোর জন্য মজা করে
বলেছি!
সকাল
দশটা বাজার আগেই পল্টুর সাথে তারা দেখা করল, পল্টু বিয়ের জন্য রেডি আর খুবই খুশি
যে নিশির মত মেয়ে নিজেই তাকে পছন্দ করে বিয়ে করছে বলে। অবশ্য পল্টুর বাবা বলছিলেন,
নিশি জেদের বশে একাজ করছে পল্টু তুই সিদ্ধান্ত পাল্টা। নিশির উপযুক্ত হতে হলে তোকে
আগে মানুষ হতে হবে!! কিন্তু পল্টু তা শোনেনি, এসব জেনেই অর্ক তিয়াস, বিল্লাল,
তূর্য, শেরাম, পারুল, তুলি সবাই অনুরোধ করল এ বিয়ে না করতে।
পল্টু
তো রেগে আগুন! তোমাদের এত সাহস! সবাই বেরিয়ে যাও বলছি...
কোন
উপায় না দেখে তারা ফিরে আসতে আসতে তিয়াসকে দায়ি করছিল । তিয়াস আর নিশি বরাবর
বিপরীতমূখি! কিন্তু দূজনের আবার অনেক ভাব ও আছে। একই সাবজেক্ট নিয়ে পড়ায় সিরিয়াস
স্টুডেন্টসের মত তারা শেয়ার করে। একসাথে কত গল্প করে আবার বেড়াতে ও যায় সবাই
কিন্তু সামান্য কিছু নিয়েই ঝগড়াটা শুরু এদের কাছে ডালভাত। পরে আবার সেই বন্ধু!
তাদের দেখলে মনে হবেনা একটু আগেও ঝগড়া হয়েছিল ।
তিয়াস
পিছু ফিরে এক দৌড়ে পল্টুর কাছে যায়। পল্টুর দুজন সাগরেদ ও তৎক্ষণে হাজির, তারা
কাজি অফিসের দিকে ছুটছে। পল্টু তিয়াসকে পাত্তা না দিয়ে চলে গেল।
তিয়াসের
মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছেনা যেন মেঘ জমেছে। সবার মুখ চুপসে গেছে! নিশিকে দেখা গেল
একটা কালো শাড়ী পরে সেজেগুজে কাজি অফিসে ঢুকছে।
জীবনে
এই প্রথম কোন মেয়ে বিয়ের দিনে কালো শাড়ী পরল! বিড়বিড় করে বলছিল তিয়াস
চেহারায়
পুরে বিষন্নতার ছাপ বুঝাই যায়। শেষবারের মত সবাই অনুরোধ করল এ বিয়ে না করতে কিন্তু
নিশির এক কথা! পল্টু সে ও পুরুষ! হোকনা মাস্তান। নিশ্চয়ই তিয়াসের মত কাপুরুষ না!!
সবাই
বুঝে ফেলল তিয়াসের কথায় রাগ করেই এই কাণ্ড তাছাড়া কোন একটা মেয়ের গাঁয়ের রং ফর্সা
নয় বলে কেউ রিজেক্ট করলে মানষিক অবস্থা কি হতে পারে??
কাজি
রেডি বিয়ে পড়ানোর জন্য । পল্টু খুব এক্সাইটেড! ওদিকে নিশি যেন শক্ত কাঠের পুতুল
বসে আছে । তিয়াস দেরি না করে পল্টুকে একমিনিট সময় দিতে বলল। পল্টু কি ভেবে বাইরে
এসে বলল, এই ছেলে তোর সাহস তো কম না! কি হয়েছে বল তাড়াতাড়ি!
তিয়াস
দু’পা জড়িয়ে বলল, বড়ভাই দোহাই আপনার নিশিকে বিয়ে করবেননা। আমি নিশিকে ছাড়া
বাঁচবনা। তিয়াস হাউমাউ করে কেঁদে উঠল । বাকী সবাই অনুরোধ করছে, বড়ভাই আপনি যা
বলবেন আমরা সেই কাজ করে দেব। আমরা আপনার বিগ সাপোর্টার হব। শুধু নিশিকে বিয়ে
করবেননা।
ওদিকে
তিয়াসের কথা শুনে সবাই অবাক! কি বলছে ছেলেটা? নিশিকে ছাড়া বাঁচবেনা!! সপ্তম
আশ্চর্যের মত আধঘন্টার পা ধরার ও দুই গালে ঠাস ঠাস চড় খাবার পর যা ঘঠল তার জন্য
বোধহয় কেউ প্রস্তুত ছিলনা। পল্টু রাজি হয়ে গেল আর নিজের জায়গায় তিয়াসকে বসিয়ে দিল।
কাজির সাথে কথা বলে পেপারওয়ার্ক করা হয়ে গেল শুধু কাবিনে সাইন হবে। নিশির কোন বোধই
নেই। ভাবলেশহীন ভাবে সাইন করে দিল, কাজি সাহেব যখন বিয়ে পড়ান সে কিছুই শুনতে পেল
বলে মনে হলনা । বিয়ে পড়ানো হয়ে গেলে সবাই বেরিয়ে আসলে নিশি পল্টুকে বললচল বাসায়
যাই । পল্টু বলল, তিয়াস নিশিকে বাসায় নিয়ে যাও! নিশি আকাশ থেকে পড়ল মানে? আমি
তোমার বিয়ে করা বউ তোমার বাসায়ই ত যাবার কথা! নিশি সাফ জানিয়ে দিল সে তার বাবার
বাসায় ফিরে যাবেনা ।আর তিয়াসের মত শত্রু যেন তাদের পিছু পিছু না আসে!
পল্টু
বলল, কে বলল আমি বিয়ে করেছি? মাস্তানেরা বিয়ে করেনা! তোমার বিয়ে হয়েছে তিয়াসের
সাথে আর এই হচ্ছে প্রমান কাবিননামা। নিশি মাথা ঘুরে জ্ঞাণ হারাবার আগে তিয়াসের
গালে ঠাস করে চড় দিতে গিয়ে পড়ে গেল । পারুল ধরে ফেলল, কিছুক্ষণ পরে সে সুস্থতা
পেয়ে বলল, কি করে আমার একটা শত্রুর সাথে বিয়ে হল!! চরম চিটিং করেছে সবাই আমার সাথে
।
তিয়াস
সিরিয়াসলি বলল, নিশি সত্যি বলছি আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি বলেই তোমাকে রাগাতাম ।
বিলিভ মি আর এরকম টিজিং জীবনে ও করবনা। তুর্যরা যদি সময়মত আমাকে খুঁজে না আনত
তাহলে তোমাকে চিরদিনের মত হারাতে হত।
নিশির
চোখ কপালে উঠে গেল বলতে লাগলো, অভিনয় তো ভালো জানিস! যা না হিরো আলমের মত ঢালিউডে
নাম লেখা! তোর কপাল খুলে যাবে!
তিয়াস
নিশির হাত ধরতে গেলেই ঠাস করে চড় গালে! এমন দজ্জাল বউরে বাবা বলে তিয়াস বন্ধুদের
বলল ঐ তোমরা এখন ভিলেন হয়ে গেলে? বিয়ের দিনে আমার চড়ভাগ্য খুব ভালো! দজ্জাল বউ
নিয়ে আমি চললাম!!
Shamsun
Fouzia
16/5/21
New
York,USA
No comments