স্বপ্নের সিঙ্গাপুর
স্বপ্নের সিঙ্গাপুর
স্বপ্নের ""Shell's Bukom Petrochemical Refinery In Singapore""
আমার প্রতিটা কর্মক্ষেত্রকেই আমি নিজের সাথে মানিয়েছিলাম। কিন্তু কোন কর্মক্ষেত্রই আমাকে বেশিদিন ধরে রাখতে পারেনি। যার কারনে এ অবধি ৯ টি কর্মক্ষেত্রের নানাবিধ মানুষের সাথে খুব ভালো সম্পর্ক এবং টুকিটাকি নানা কাজে নিজেকে অভিজ্ঞ করার সুযোগ ছিলো।
তবে, শিপইয়ার্ডে ২০২০ সালটা আমার জন্যে অভিষাপ স্বরুপ হয়ে পড়ে। পরিবেশ, পরিস্থিতি এবং কোম্পানী ম্যানেজমেন্ট এর নানাবিধ অরুচিপূর্ণ কার্যকলাপে আমি যখন অতিষ্ঠ। ঠিক তখনি এই প্রথম সিঙ্গাপুরের ইতিহাসে সুযোগ মিললো শিপইয়ার্ড থেকে ট্রান্সফার হয়ে প্রসেস মেইনটেনেন্স বা কন্সট্রাকশনে নিয়োগ নেওয়ার। আমিও সুযোগে খুঁজতে লাগলাম পছন্দের কোন কর্মক্ষেত্র। এদিক ওদিক খুঁজে অনেক কোম্পানী পাচ্ছিলাম। তবে নিজেন মন মতো পাচ্ছিলাম না।
হঠাৎ একদিন শ্রদ্ধেয় এক বড় ভাই এর ম্যাসেজ। জানতে চাইলেন কোম্পানী খুঁজতেছি কার জন্যে? বললাম, আমার জন্যে।
তিনি আমাকে একটি কোম্পানীর ঠিকানা দিয়ে যোগাযোগ করতে বললেন। তার কিচুক্ষন পরেই বললেন, তিনি সকল ব্যবস্থা করে দেবেন। সে থেকে সব কিছু তিনিই করলেন। বড় ভাই এর সম্পূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আমাকে নতুন কোম্পানীতে ট্রান্সফার করিয়ে দিলেন।
খুব চিন্তিত ছিলাম। নতুন কোম্পানী, নতুন পরিবেশ, নতুন সকল মানু্ষজন। তবে যখন জানতে পারলাম রোজ লঞ্চ/ফেরিতে করে সাগর পাড়ি দিয়ে কাজের জায়গায় পৌছতে হবে, আনন্দে মনটা ভরে উঠলো। বরাবরই প্রকৃতি প্রেমি মানুষ আমি। জীবনে প্রথম চাকরিটা কুমিল্লার লালমাই পাহারের প্রতিটা টিলা থেকে টিলা হেটে কাটিয়েছি গাছ-পালা জঙ্গলকে আপন করে। আর সাগরতো আমার মতন মানু্রষের জন্যে ভালোবাসার আরেক নাম।
যাই হোক, নতুন কোম্পানীর সাথে সকল কাগজ-পত্র এবং চুক্তিপত্রে সাক্ষর করে রওনা হলাম স্বপ্নের ""Shell's Bukom"" এর উদ্দেশ্যে। কিন্তু সেদিন আমার যাত্রা শুভ ছিলোনা। কিছুটা সমস্যার কারনে ফেরি গেইট থেকে ফিরে এলাম। পরবর্তী যাত্রা ঠিক হলো ১১ অক্টোবর। ফেরিঘাটে পৌছালাম। RFID নিলাম। এবং লঞ্চে উঠার জন্যে লাইনে দাড়ালাম। সবাইকে অনুস্বরন করে লঞ্চে উঠলাম। যাত্রা শুরু হওয়া থেকে শুরু করে লঞ্চ ঘাটে গিয়ে পৌছানো পর্যন্ত আমি স্নিগ্ধ সকালের সুন্দর গোলাকার রক্তিম সূর্য, সাগর ও সাগরের ঢেউ, সাগরে ভেসে থাকা ছোট-বড় নানাপ্রকারের জাহাজ ও নৌকাগুলোর সুন্দর্য উপভোগ করছিলাম।
অবশেষে ঘাটে গিয়ে পৌছালাম। অসাধারন একটি মনোমুগ্ধকর জায়গা Shell Bukom. পৃথিবীর একমাত্র Refinery যার চারদিকে সমুদ্র।
প্রথম দিন সবকিছুই অচেনা, অজানা। কোম্পানী এডমিন থেকে আমাদের নতুনদের আইডি করে দেওয়া হলো। কোম্পানীর নির্ধারিত Uniform পড়ে বাসে করে কাজের সাইডে গেলাম।
এই প্রথম কোন কর্মক্ষেত্রে একটি কাজের সাইডে আমি একমাত্র বাঙ্গালী। বাকি সবাই তামিল, আন্দ্রা, বার্মা, চাইনিজ, ফিরিপাইনি। ইংরেজি ভাষা শেখার গুরত্ব এই প্রথম টের পেলাম।
যাই হোক প্রথম দিনটা ঘুরে ফিরেই কেটে গেলো। বেশ কিছুই নতুন। নিয়ম-কানুন ও ভিন্ন। আমাকে মানি্রযে নিতে আরো অনেক সময় নিতে হবে বু্ঝে গেছি।
পৃথিবীতে কঠিন ও চ্যালেন্জিং কর্মক্ষেত্রের মধ্যে Petrochemical Refinery একটি। আমি কর্মক্ষেত্রে কখনো আপোষ করিনি। এইবারও করবোনা।
দোয়া প্রার্থী সকলের কাছে।
আল-আমিন
সিঙ্গাপুর প্রবাসী
No comments