Header Ads

সিঙ্গাপুরে ঘন ঘন আবাস পরিবর্তন এবং নিজেকে মানিয়ে নেয়া

সিঙ্গাপুরে ঘন ঘন আবাস পরিবর্তন এবং নিজেকে মানিয়ে নেয়া

মানুষ যেকোনো পরিবেশে নিজেকে খুব দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে৷ নতুন পরিবেশে, নতুন মানুষদের সাথে প্রথম কয়েকদিন হয়তো অস্বস্তি বোধ করে কিন্তু কয়েকদিনেরই মধ্যেই নতুন পরিবেশ নতুন মানুষদের প্রতি অদ্ভুত মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যায়। 

যেমনটি আমি হয়েছিলাম। আমাদের যখন হোটেল থেকে অস্থায়ী সরকারি ফ্লাটে থাকার ব্যবস্থা করা হয়, তখন জনকে একসাথে একরুমে দেওয়া হয়। এই জনের মধ্যে রিয়াজ মোল্লার সাথে দীর্ঘদিন একই রুমে থাকি বাকি জনের সাথে পূর্বে পরিচয় থাকলে কখনো একরুমে থাকা হয়নি৷ তাই প্রথম প্রথম ভেবেছিলাম এদের সাথে হয়তো আন্তরিকভাবে মিশে থাকতে পারবো না। 


কিন্তু না কয়েকদিনের মধ্যেই আমার চিন্তাভাবনা সব পাল্টে যায়। খুব দ্রুত তাদের সাথে আমার সখ্যতা গড়ে উঠে৷ তাদের ব্যবহার কথা বার্তায় একবারও মনে হয়নি আমার প্রথম বারের মতো সবাই একসাথে এক রুমে থাকছি। আমার কাছে মনে হলো তাদের সাথে আমার দীর্ঘদিনের পরিচয় আমরা যেনো একে অপরের আত্নীয়৷ পরবাসে এযেন আমার পরিবার৷ 


আমি সাধারণত রুমে লেখালেখি, ভিডিও করা বা লাইভ প্রোগ্রাম নিয়ে ব্যস্ত থাকি৷ 

প্রথম মনে হয়েছিলো তাদের কারনে ভিডিও করা বা লাইভে তেমন একটা আসা সম্ভব হবে না। আমি লাইভে আসলে ওরা হয়তো উচ্চস্বরে কথা বলে আমাকে বিরক্ত করবে কিংবা ভিডিও করতে সমস্যা হবে। 


কিন্তু না আমার চিন্তা ভাবনা সব পাল্টে গেলো৷ আমি যখন লিখতে বসি তখন ওরা আমার সামনে এসেও কথা বলে না৷ মশিউর মাঝেমাঝে আমার কাছে কথা বলতো আসতো। সে রুমে প্রবেশ করে আমার পাশে চুপচাপ বসে থাকতো যখন আমি লেখা শেষ করে তার দিকে তাকাতাম তখন সে বলত, ভাই আপনার সাথে কি কথা বলা যাবেসে আমাকে ভালবেসে দাদু ভাই বলে ডাকত৷ আমি খাতা কলম পাশে রেখে বলতাম হ্যাঁ ভাই বলা যাবে। তখন সে বিভিন্ন বিষয়ে কিছু কথা বলে যেতো৷ 


তারমনে ভীষণ যন্ত্রনা৷ ভালবেসে বিয়ে করেছিলো। কিন্তু কপালে সুখ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি৷ এক বছরের সন্তানকে রেখে তার স্ত্রী পরপারে পাড়ি জমায়৷ এখনো সে স্ত্রীর ভালোবাসার সুখস্মৃতি নিয়েই বেঁচে আছে। আমি কথার ফাঁকে মাঝেমাঝে বলি ছোট ভাই বিয়ে করবে কবে? আমার প্রশ্ন শুনে তার চেহারায় অমাবস্যার অন্ধকার নেমে আসে। 


খানিক চুপ থেকে বলে দাদু তার স্মৃতি এখনো ভুলতে পারি না। বাকিটা জীবন তার সুখস্মৃতি নিয়েই বেঁচে থাকতে চাই। এখন জীবনের একটাই লক্ষ্য ছেলেকে মানুষ করা৷ আমি আর কথা বাড়াই না৷ তার দিকে তাকিয়ে উপলব্ধি করি প্রকৃত ভালোবাসা। এটাই হয়তো প্রকৃত ভালোবাসা। 


তাছাড়া আমি লাইভে আসলে রুমের সবাই চুপচাপ বসে থাকতো কিংবা কানে হেডফোন লাগিয়ে মিউজিক শুনতো৷ আর রিয়াজ মোল্লা তো রুম থেকে বের হয়ে আমার লাইভ শেষ করার অপেক্ষা করতেন। 


তবে হুমায়ুন ভাইয়ের হাতে মাছের ভর্তার স্বাদ এজীবনে ভুলবো না৷ আর যাকারিয়া ভাইয়ের হাতের বিরিয়ানির প্রশংসা না করলেই নয়৷ রান্না করা যে শিল্প তা তাদের দুজনকে না দেখলে উপলব্ধি করতে পারতাম না৷


তাছাড়া তাপস ভাই আমাদের সকলের সাথে আন্তরিকতার সাথে মিলেমিশে থাকতেন৷ যখন সবকিছু নিজের মতো করে উপভোগ করছিলাম ঠিক তখন আবারো রুম পরিবর্তন৷ এখন নতুন রুমমেটদের সাথে ভালোই মানিয়ে নিয়েছি। আসলে আমরা চাইলে যেকোনো পরিবেশে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারি। এরজন্য দরকার সবার আন্তরিকতা সদিচ্ছা। 

ভালো থাকুক সকল প্রবাসীরা। 


ওমর ফারুকী শিপন। 

সিঙ্গাপুর প্রবাসী৷

 


No comments

Powered by Blogger.