স্বেচ্ছা নির্বাসনে নারী _ হাসনাহেনা রানু
স্বেচ্ছা নির্বাসনে নারী
ভালবাসা এক মনে হয়
আমি বিশ্বাস করি না ---
ভালবাসতে দুই মন লাগে -নারী,
পুরুষ উভয়ের --
অথচ সেই পুরুষরা কি করে ?
ভালবাসাকে শুধু দু' হাতে তছনছ করে
ক্ষান্ত হয় না
নির্মম ভাবে খুনও করে ।
এখনও নাকি ভালবাসা আছে
পৃথিবী বলল সে কথা,
আমি আকাশের কাছে শুনতে চেয়েছি
আকাশ কোন কথা বলেনি,
আমি ফুলের কাছে গিয়েছি
ফুল মুখ খোলেনি,
আমি সবুজ প্রকৃতির কাছে গিয়েছি
এর একটা উত্তর না নিয়ে ফিরব না
বলে,
সবুজ ব্যাকুল চিত্তে বলল,
আমার প্রতিটি নিঃশ্বাস প্রকৃতিকে ভালবাসার জন্য ব্যাকুল ;
এখন ও ভালবাসা বেঁচে আছে,
তুমি বরং
পাখি,
প্রজাপতি আর
ঘাস ফড়িংয়ের কাছে যাও ---
ওরা বিমুগ্ধ ঘাস শিশিরের কাছে আসার
গল্প শোনাবে !
বসন্ত কোকিল কি প্রেমের বন্ধনে
বাঁধা,
রাত্রি, চাঁদ
আর অদৃষ্টের নারীরা -
ওদের জীবনে যে কত কত দুঃখ নেমে
আসে -
গভীর অন্ধকার নীল সমুদ্রের মত
আবার ভয়াল কাল রাত্রির মত ও হতে পারে --
আমি এত দূর যাচ্ছি কেন ?
তুমি তো একজন কবি ?
কিন্ত কবি হলে কি হবে?
তুমি নিঃস্বর্গ অরণ্যের গোলক ধাঁধাঁয়
কাল রাত্রির মতই --।
কোন রকম বেঁচে বর্তে আছ
পরগাছার মতই এক জীবনে --
কেন তোমরা কি পার না ?
সমস্ত অন্ধকার মুছে ফেলে
আলো জাগাতে --
কবিরা সব সব পারে,
তুমি নারী তবু এক কবি
এ সমাজের কাছে তোমার ও দায় আছে-
তোমরা ইচ্ছে করলে সব কিছু এড়িয়ে যেতে পার না --
ভালবাসায় ভরা এই পৃথিবী
অর্ধেক নর
অর্ধেক নারী ---
নারী ছাড়া নর কোন কালেও একা হয়নি জয়ী !
এই সত্যটা নরকে উপলব্দী করতে
হবে,
তবেই পৃথিবীতে ভালবাসার সমতা ফিরে আসবে -
নশ্চেৎ পৃথিবীটা দু' ভাগে বিভক্ত হয়ে
যাচ্ছে,
অর্ধেক নর
অর্ধেক নারীতে,
কে একজন নর ( পুরুষ) এই কিছুদিন আগে বলেছিল------
বাপ,ভাই,স্বামী ছাড়া তোমার কোন গতি
আছে ?
আমি সেই পুরুষ বন্ধুকেই বলছি,
মা, বোন,স্ত্রী ছাড়া আপনারা কি চলতে পারবেন?
যদি পারেন?
তাহলে নারী ও পারবে ----
এ অযথা কোন তর্ক বির্তক নয় -
সেই কবিতার নেপথ্যে একটা ঘটনা ছিল,
সম্প্রতি তনু ধর্ষিতা এবং নিঃসংশয় ভাবে খুন হয়েছে -
সেই ঘটনায় সমগ্র জাতি একটু হলেও
নড়েচড়ে বসেছে -
দেশ ও উত্তল,
কিন্ত হলে কি হবে -----
ঘটনা প্রায় অন্য দিকে বাক নিয়ে
চাপা পড়ার পথে চলে গেছে --
এই ক' দিন মিটিং মিছিল রাজপথ
ঘেরাও কর্মসূচি দেই -
তারপর ধীরে ধীরে সব ঠান্ডা হয়ে
যায় -
আবার নতুন কোন ঘটনার পেছনে
সবাই উঠে পড়ে লাগে -
এই তো দেখে আসছি,
এর ব্যাতিক্রম কখনই কিছু হয়নি ।
ঠিক তনুর মতই --
এই বাংলার আরেক মেয়ে শাজনিন ধর্ষণ ও হত্যা মামলাটা
প্রথম আলোয় পড়ে সাথে সাথেই আমি সেদিন সেই কবিতাটা
পোস্ট করেছিলাম,
শুধুই কি তনু,
শাজনিনরা এই বর্বরোচিত ঘটনার শিকার?
হাজার হাজার কন্ঠস্বর এক সঙ্গে প্রতিবাদের ঝড় তুলবে, না --------
এঁদের সংখ্যা কত শত হাজার ছাড়িয়ে গেছে তার কোন হিসেব নেই --
আজ থেকে ১৮ বছর আগে ১৯৯৮ সালে
২৩ এপ্রিল রাতে শাজনিন ঢাকা গুলশানে নিজ বাসায় ধর্ষণ শেষে খুন হন।
বিগত ১৮ বছর ধরে মামলার বিচার কার্যক্রম আজও প্রক্রিয়াধীন ---
আমার কষ্টটা এখানেই :
সেই ২২ বছর আগের ঘটনার পূনরাবৃত্তি আজও বারবার ঘটে চলেছে ;
আজও আমাদের নারীদের এই নির্মম নির্যাতনের হাত
থেকে মুক্তি মেলেনি -!
তবে কিছুটা আশার কথা হল---
শাজনিন হত্যা মামলার পাঁচ আসামির মধ্যে চার জনের ফাঁসির আদেশ কার্যকারী
হয়েছে -
আমার যে সব পুরুষ বন্ধুরা সেদিনের কবিতাটাতে যে সব মন্তব্য ছুড়ে মেরেছিলেন,
এই যে আপনারা কি পারবেন --
তনু,শাজনিনদের মত নিঃস্পাপ ফুলের মত
ধর্ষিতা ও পরবর্তীতে খুন হয়ে যাওয়া মেয়েদের জীবন ফিরিয়ে দিতে?
তাঁদের ও বেঁচে থাকার অধিকার আছে বা ছিল,
এ পৃথিবীর আলো বাতাসে শ্বাস প্রশ্বাস নেয়ার পূর্ণ অধিকার ছিল,
তাহলে কেন কিছু কতিপয় লম্পট কা- পুরুষদের লালসার শিকার হতে হয় এসব ফুলের মত পবিত্র মেয়েদের?
এর সঠিক জবাব দিতে পারবেন সেই সব পুরুষ বন্ধুরা?
খুব তো বড় বড় কথা বলেছিলেন সেদিন-
নারী মানেই কি শুধু ভোগের পণ্য?
কেন মনে করেন না ---
আপনারা যে নারীকে অসম্মান করেন
সেই নারী আপনার মা,
বোন,
কন্যা আপনার আপন জন।
কতিপয় কিছু লম্পটদের ভেতরের পশুত্ব নিবৃত্তি করতে
আর কত কত তনু,শাজনিনদের জীবন বলী দান দিতে হবে?
সেদিনের সেই কবিতাটা আমার কিছু
পুরুষ বন্ধুদের অহমে খুব লেগেছিল-----
ঠিক তেমনি আমাদের ও লাগে-
যখন দেখি,
রাস্তা ঘাটে,স্কুল কলেজে, চলন্ত গাড়িতে, আফিস পাড়ায়,
বাসা বাড়িতে হর হামেশায়
মেয়েরা ধর্ষিতা হয়ে খুন হয়ে যাচ্ছে --
তখন কলম এমনিই গর্জে ওঠে ---
অপশক্তির বিরুদ্ধে -।
অপরাধ,অপরাধই...
তাকে সার্পোট করার কোন মানে হয় না --
আজ অন্যের কন্যা,
অন্যের স্ত্রী,
অন্যের মা,বোন ঘটনার শিকার -
কাল যখন আপনার কন্যা,
মা,বোন, স্ত্রী একই ঘটনার শিকার হবে?
তখন আপনার ঠিক কেমন লাগবে?
ভেবে দেখেছেন?
ভাল লাগবে?
ভাবুন... ভাবুন....
সময় থাকতেই এগিয়ে আসুন আমরা
সবাই মিলে এসব অপরাধের বিরুদ্ধতা করি -
এবং দেশটাকে সুন্দর একটা শান্তি পূর্ণ
পরিবারের মত গড়ে তুলি -
যেন একটি দেশ,
একটি পরিবার হয়ে ওঠে--
সবশেষে --
আবারও বলতে ইচ্ছে করছে,
ভালবাসা এক মনে হয়
আমি বিশ্বাস করি না -
ভালবাসতে দুই মন লাগে
নারী,
পুরুষ উভয় 'র .......!
সেখানে এত পৈশাচিকতা কেন ?
হাসনাহেনা রানু
No comments