Header Ads

মাঝ রাতে ভুতের মুখ মুখি

 

মাঝ রাতে ভুতের মুখ মুখি

আমি তখন চাকুরি রত ছিলাম, সেটা ১৯৮৬ সালের দিকে। নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলায়। সে সময় আমি সোনালী ব্যাংক পত্নীতলা শাখার সেকেন্ড অফিসারের দায়িত্বে ছিলাম। সময় আমি প্রতিদিন সন্ধ্যার পর অফিসার্স ক্লাবে তাস খেলতে যেতাম। উপজেলা চত্তর থেকে আমার বাসা মূল বাজার এলাকার দিকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে। উপজেলার চত্তর থেকে দক্ষিনে।

এক শীতের রাতে তাস খেলতে খেলতে অনেক রাত হয়ে যায়। রাত প্রায় ১২টার কাছা কাছি। ক্লাবে আর যারা খেলেন তাঁরা সবাই উপজেলা কোয়াটারে থাকেন। সে দিন ক্লাব থেকে বের হয়ে পাকা রাস্তা ধরে হাটতে লাগলাম। আমি এখানে ছোট থেকে বসবাস করছি সে কারণে পথ ঘাট সবই আমার চিরচেনা। বাইরে প্রচন্ড শীত আর কুয়াশা,আমার গায়ে ১০০% পশমি কাপড়ের কোর্ট, মাথায় মাফলার। আমি যে পথে ফিরছি সেটা মেইন রোড নয়। উপজেলা থেকে পুরাতন বাজারে যাবার একটি পাকা রাস্তা,আমি উত্তর থেকে দক্ষিনে হাঁটছি। রাস্তাটি দিয়ে বড় গাড়িও চলতে পারবে। শীতের রাত প্রায় বার'টা, চারিদিকে একটা সাংঘাতিক নির্জনতা নিস্তব্ধতা। আমার পায়ের জুতার আওয়াজ ছাড়া কোন শব্দ নেই।

আমার চলার পথে দশ মিনিট হাঁটলে প্রথমে একটি ছোট রাস্তার চার মাথার মোড় পড়বে। খানে রাস্তার পূর্বদিকে গার্লস হাই স্কুল, আর একটু এগিয়ে গেলে রাস্তার পূর্ব দিকে হাসপাতাল। হাসপাতাল পেরিয়ে গেলে একটু বাদে পূর্বদিকে হাইস্কুল মাঠ, তারপর আর একটু সামনে গেলে রাস্তার দু'পাশে মানুষের বাসতি এলাকা।

মিনিট দশেক হাঁটার পর অামি যখন গার্লস হাইস্কুলের চার মাথার মোড়ের কাছাকাছি এসে পড়েছি, সেখানে একটা ছোট সাঁকো। আর চার মাথা মোড়ের পশ্চিম পার্শ্বে ঐখানে রয়েছে একটা অনেক পুরোন অশ্বথ গাছ, যেটাকে পাকুড় গাছও বলাহয়। সাঁকো থেকে দশ কদম হাটলে আমি গাঁছটার কাছে পৌঁছে যাব। হঠাৎ সাঁকোটার উপর থেকে আমার নজর পড়লো গাছটার কান্ডের উপর যেখান থেকে বড় বড় শাখা ছড়িয়ে গেছে সেই জায়গাটার উপরে, দেখি ঠিক মানুষের মতো কে যেন কান্ডের উপরের জায়গাটায় পশ্চিম দিকে মুখ করে বসে আছে। আমি সাঁকোর উপর থমকে দাঁড়িয়ে পড়লাম। এতো প্রচন্ড শীতেও আমার গা ঘেমে গেল। আমি ভাবছি পিছন ফিরে দৌড় দেব কিনা,আবার ভাবছি পেছন ফেরার সাথে সাথে যদি ওটা এসে আমার ঘাড় মটকে দেয়! মিনিট খানেক দাঁড়িয়ে থাকলাম। দেখি বাতাসে তার মাথার চুলও নড়ছে। আমার হাতে টর্চ লাইটও নেই যে, দেখবো আসলে ওটা কী? জ্বীন না ভূত না কী, সত্যিই কোন মানুষ! পিছন না ফিরেই পিছন দিকে পিছিয়ে যেতে লাগাম আর জিনিসটার উপর স্থির নজর রাখলাম সে নেমে আসে কিনা? এদিকে আমার শরীর দিয়ে ঘাম ছুটেছে, হার্টবিট অনেক বেড়ে গেছে।

বেশ খানিকটা পিছানোর পর আমি পিছন ফিরে দিলাম একটা ভোঁ দৌড়, এক দৌড়ে UNO সাহেবের বাসার সামনে হাজির। কলিং বেল বাজালাম তিনিও ক্লাবে আমাদের সাথে খেল ছিলেন। তিনি কলিং বেল শুনে গার্ডকে দরজা খুলতে বললেন,আমাকে দেখে তিনি অবাক, আমাকে নিয়ে ড্রয়িং রুমে বসে সব কাহিনী শুনে কয়েক জন অফিসারকে ডাকলেন,যারা ক্লাবে নিয়মিত বসি সবাই তখন জেগেই রয়েছেন। সবাই মিলে টর্চ লাইট হাতে আমরা গাছটার দিকে চললাম। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় আমরা গাছটার কাছাকাছি পৌঁছে যখন কয়েকটা টর্চের আলো একসাথে গাছের নির্দিষ্ট স্থানে পড়লো তখন সেখানে কিছুই দেখা গেল না। কেউ আমাকে বিশ্বাস করে ছিলেন আবার কেউ কেউ বললেন আমার মনের ভুল।

সকলে সে দিন আমাকে আরো খানিকটা এগিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। আমি যখন আমার বাড়ির কাছে এসে পড়েছি তখন দেখি অতো রাতে একটা লোক আমার পাশ দিয়ে যেতে যেতে বললো কীরে ভয় পেয়ে গেছিলি? আমি চমকে উঠে পিছন ফিরে দেখি সেই লোকটা আর নাই। আমার গা ছম ছম করে উঠলো দৌড় দিয়ে বাড়ির মধ্যে ঢোকার পরও আমার ভয় কাটে না।

তার পর আজ পর্যন্ত কোন দিন রাতে আমি গাছের ধারে পাশে আর যাই নাই। আর এই রহস্যেরও কোন হদিস করতে পারি নাই।

আবু হেনা মোস্তফা কামাল

 


No comments

Powered by Blogger.