Header Ads

স্বপ্নের সিঙ্গাপুর এসে কি পেলাম দুঃখ ছাড়া

স্বপ্নের সিঙ্গাপুর এসে কি পেলাম দুঃখ ছাড়া

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় সিংগাপুর প্রবাসী বাংলাদেশি ভাইয়েরা আশা করি আল্লাহর রহমতে সকলেই ভাল আছেন!

আমি দুচোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে ৩০/০৯/২০১১ ইং তারিখে সর্বপ্রথম স্বপ্নের দেশ সিংগাপুর আসি। মানুষের কাছে শুনতাম যে সিংগাপুরে গেলেই নাকি টাকা আর টাকা।

চোখে রংগিন স্বপ্ন নিয়ে এসে যেই কোম্পানিতে এলাম এসে শুনি কোম্পানির নাম হারু সাপ্লাই।

যাইহোক এতো কিছু বুজি না সাপ্লাই বা মেইনকন কাকে বলে। কাজ শুরু হলো কাজ করি দিন যায়, দেখতে দেখতে একটি মাস অতিবাহিত হওয়ার পড়ে যখন বেতন আসে, খুবই খুশি আজ বেতন পাবো দৌড়ে গেলাম বেতন আনার জন্য।

বেতন হাতে পেয়ে টেনশন শুরু হলো, গুনে দেখি মাত্র চারশ আটষট্টি টাকা সিঙ্গাপুর ডলার।

এই টাকা দিয়ে কি হবে? নিজের খাবারের টাকা ১৩০ ডলার, পকেট খরচ ৬০ ডলার, পরের মাসের চলার জন্য ১০০ ডলার, সব মিলিয়ে দেখি ৪৬৮-২৯০=১৭৮ ডলার অবশিষ্ট।

চোখে যেন অন্ধকার নেমে এসেছে, সিঙ্গাপুর আসার সময় লেগেছিল বাংলা টাকা চার লাখ। এই টাকা কি ভাবে পরিশোধ করবো।

দেখতে দেখতে একটি বছর চলে গেছে,মা বাবা ভাই বোন আত্বিয় স্বজন সবাইকে ছেরে এসে নিজের আসল টাকার অর্ধেকও পরিশোধ করতে পারিনি।

পারমিট হলো না চলে যেতে হলো নিজের ঠিকানা সেই গ্রামে , যেখানে সবাই আছে। বাড়িতে গিয়ে আবারও আসার জন্য কোম্পানির সন্ধান পেয়েছি দীর্ঘ দশ মাস পরে।

এবার আসতে টাকা লাগে বাংলাদেশের দুই লাখ। সেই টাকাটা নিতে হলো ঋন করে দুই লাখ টাকায় লাভ হলো ষাট হাজার টাকা মেয়াদ এক বছর।

আগের আছে প্রায় তিন লাখের বেশি। প্রায় সারে পাচঁ লাখ টাকা ঋন নিয়ে আবারও পারি জমালাম সিংগাপুরে।

কপালে না থাকলে ঘি ঠক ঠকালে হবে কি? যেই লাউ সেই কদু, কাজ করছি মাস থেকে মাস অতিবাহিত হয়ে চলেছে হঠাৎ যেন আবারও সেই কপাল পোরলো।

মাত্র আট মাস পনের দিন পরে কোম্পানির কাজ নাই তাই আমাদের দেশে পাঠিয়ে দিবে।

এম এম গেলাম কি করা যায়, এম এম গিয়ে যোগাযোগ করে জানতে পারলাম কোম্পানির কাজ না থাকলে বস, তার ওয়ার্কার্স দেশে পাঠিয়ে দিতে পারে তাতে কোন সমস্যা নেই।

কি আর করবো একবুক হতাশা নিয়ে চলে গেলাম বাড়িতে। হিসেব করে দেখি এবার টাকা পাঠিয়েছি মাত্র এক লক্ষ ষাট হাজার।

আবারও ঋনের টাকা থাকলো চার লাখ টাকা। হায় হায় হায় উদাস হয়ে বসে থাকি কারও সাথে কথা বলিনা ঠিক ভাবে।

আবারও চৌদ্দ মাস পরে আরও একটা কোম্পানির সন্ধান পাই এবারও আসতে টাকা লাগে বাংলাদেশের এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার। ঋন মোট পাচঁ লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা মাথায় নিয়ে তৃতীয় বারের মতো পারি জমালাম সিংগাপুরে।

এবার বেতন একটু ভালোই মাসশেষে দেখি সিংগাপুর ডলার আটশো। খাওয়া আর খরচ মিলে তিনশ ডলার। যাক বাংলাদেশের ত্রিশ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিই প্রত্যেক মাসে এবার আবারও জীবনে নেমে আসে সেই কাল বৈশাখের জর।

নয় মাস পরে কোম্পানি একটা এক্সিডেন্ট করে বন্ধ করে দেয়। আর আমাকে চলে যেতে হয় নিজের দেশ বাংলাদেশ।

এবার মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম আর যাবো না সিংগাপুর। দেশে টাকা ঋন করে একটা অটো গাড়ি কিনা চালাতে শুরু করলাম।লাভ সহ অটোর দাম পরে দুই লাখ টাকা আগের ছিল দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা সব মিলিয়ে আবারও চার লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা।

দিন ভালোই চলছে দিন কাল চলতে চলতে একটি বছর পার হয়ে যায়। হিসেবে দেখি লাভের টাকা দিয়ে এক বছরে আমার টাকা বেরে গিয়েছে অনেক দেখলাম এখনো আবার সেই আগের টাকা চার লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা। কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না দেখতে দেখতে আরও তিন বছর দেশে পার করে দিলাম কিন্তু টাকার ঋণের বুঝা কমছেই না।

এখন যা আয় করি তার চেয়ে আমার লাভ দিতে দিতে নিজের জন্য কিছুই থাকে না। আবারও সিদ্ধান্ত নিলাম যেইখানে হুচট খেয়েছি সেই জায়গা থেকেই আমাকে উঠতে হবে তাই আবারও তিন লাখ টাকা ঋন নিয়ে চলে এলাম সিঙ্গাপুরে।

২৫/১০/২০১৯ ইং তারিখে পাচ মাস কাজ করেছি পড়ে গেলাম লকডাউনে। ১৮/০৪/২০২০ ইং তারিখে আমার ঠান্ডা জ্বর কাশি হলো ডাক্তার দেখালাম রিপোর্ট অনুসারে জানলাম আমার করোনা ভাইরাস পজিটিভ।

০২/০৬/২০২০ ইং তারিখে পরিক্ষা করে রিপোর্ট অনুসারে জানলাম আমার করোনা ভাইরাস নেগেটিভ।

আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর অশেষ মেহেরবানি আমি ভালো আছি, আল্লাহর শুক্রিয়া। কাজে যোগ দিতে আহবান জানাই কোম্পানিকে, তারা আমাকে কাজ দেয় ০৮/০৬/২০২০ ইং তারিখে। কাজ শুরু করি ওটি নেই শুধুই বেসিক।

পোসায় না তাই ১০/০৯/২০২০ ইং ট্রান্সফার নিয়ে চলে এলাম লজিস্টিক কোম্পানিতে, এক মাসের মধ্যে বস কোন কাজের ব্যাবস্থা করতে পারে না তাই বস আমাকে ফোন করে বলে তুমি কোন কোম্পানি খোঁজে পেলে চলে যাও আমি তুমাকে ট্রান্সফার দিয়ে দিব।

তার পর খোঁজে পেলাম চেইন টেক কোম্পানি। কোম্পানি এপ্লাই করলে রিজেক্ট আসে তার পড়ে আবারও এপ্লাই করেছে তাতেও একই কথা রিজেক্ট।

টেনশনে ঘুম আসে না কি করি যাইহোক আল্লাহর অশেষ মেহেরবানি ত্রিতিয় বার এপ্লাই করলে এপ্রুভ হইছে। গত ১৪/১০/২০২০ ইংরেজি, আজ ২০/১০/২০২০ ইং আমি নতুন কোম্পানি চেইন টেক এর ডরমেটরিতে আসি।

এই কোম্পানিতে আসার সময় বসের সাথে কথা বলে এসেছি এই কোম্পানিতে আমার এক প্রিয় বন্দু কাজ করে তার মাধ্যমে আমি আজ চেইন টেক কোম্পানিতে চলে এসেছি। আমার সেই বন্দুকে জানাই মনের গভীর থেকে অভিনন্দন, ভালবাসা। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন আমি যেন এবার সফল হতে পারি ইনশাআল্লাহ।

সবার সু সাস্থ কামনা করছি আল্লাহ হাফেজ।

আমার লিখায় ভাষায় যদি কোন ভূল থাকে সবাই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

সহি অনুসারী শেখ জহির।

No comments

Powered by Blogger.