মীর সাহেবের সরাই ❑ সেলিম ইসলাম খান ❑ ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব_২১
মীর সাহেবের সরাই
সেলিম ইসলাম খান
❑
উপন্যাস
ছুটি খান ও তার সেনারা বদইলা গ্রাম এসেই গ্রামের আগুন নিভালেন। গ্রামে কেউ আহত হননি, কিংবা যারা আহত হয়েছেন তাদের সবাইকে ধরে নিয়ে গেছে মগহার্মাদরা। ছুটি খান গ্রামবাসীর কাছে শুনলেন, হার্মাদরা দক্ষিণ দিকে গিয়েছে। তিনি আবার নৌকা নিয়ে তাদের তালাশে ছুটলেন। কয়েক মাইল যেতেই জনপদের দিকে একটি চওড়া খাল দেখতে পেলেন। লবণ মাঝিরা যেহেতু সাগর তীর ধরে কাউকে যেতে দেখেনি। তাহলে এমন খাল ধরে তারা কোন জঙ্গলে লুকাতে পারে। কারণ তারা জানে পরাগল খানের সেনারা তাদের আস্ত ছাড়বে না। ছুটি খান জংলা খাল ধরে মাঝিদের এগিয়ে যেতে বললেন। খালটি চওড়া হলেও দুপাশ দিয়ে জংলা গাছের ডালপালা খালের ওপরে ঝুঁকে এসেছে। এসব গাছের মধ্যে কেওড়া গাছ আর কাঁটা জাতীয় গাছের সংখ্যা বেশি।
কয়েক মাইল নৌকা বাওয়ার পর জংলার ভিতর থেকে হৈচৈ শোনা গেল। তারা আনন্দে উলুধ্বনি দিচ্ছিল। ছুটি খান ইশারা দিয়ে সবাইকে প্রস্তুত হতে বললেন। তারপর জংলার ধারে নৌকা ভেড়ালেন। এখানে মগদের বিশাল নৌকাও বাঁধা দেখা গেল। সবার আগে খালপাড়ে নেমে বিড়ালের মত সন্তর্পণে এগিয়ে যেতে লাগলেন। হাতে তূণের মাথায় তীর লাগানো। দুলাল দাসের তীরন্দাজ দলকে তিনিই নেতৃত্ব দিচ্ছেন। গাছের ফাঁক দিয়ে তারা উঁকি মেরে দেখতে পেলেন, নারী শিশুসহ বন্দী জনা পন্চাশজন হতভাগ্য মানুষকে ঘিরে কয়েকশত মানুষ আনন্দে নাচানাচি করছে।
ছুটিখান ইশারা দিতেই তীর বৃষ্টি তাদের ঘিরে ধরল। কিন্তু অধিকাংশ মগহার্মাদদের টার্গেট করা গেল না। তাদের দিকে তীর ছুঁড়লে বন্দীদের গায়ে লাগতে পারে। তীরের আঘাতে ত্রিশচল্লিশ মগহার্মাদ হতাহত হয়েছে। বাকিরা আক্রমণ বুঝতে পেরে তলোয়ার ও বল্লম হাতে এগিয়ে এল। ছুটি খানরাও তূণ পিঠে রেখে তলোয়ার খাপমুক্ত করলেন। শুরু হল তলোয়ারের ঝনঝনানি। আধা ঘন্টার যুদ্ধ শেষে সকল মগসেনাই জখম হল। এদের মধ্যে বারোজন জীবিত রইল। খানসেনাদের তিনজন জখম হলেন। সহসেনারা আহত সকলকে আসামপাতার রস লাগিয়ে বেন্ডেজ বেঁধে দিল।
বন্দীদের মুক্ত করে তারা যখন বদইলা গ্রামে ফিরে এলেন, তখন পরাগল খানদের লাঠি হাতে নৌকায় উঠতে দেখলেন। তারাও গ্রামে গিয়েছিলেন।
পরাগল খানরা ছুটিখানদের নৌকা গ্রামের ঘাটের দিকে আসতে দেখে নৌকায় না উঠে তীরে দাঁড়িয়ে রইলেন। তারা বন্দী গ্রামবাসীদের মুক্ত করে আনার দৃশ্য দেখে বেশ আনন্দিত হলেন।
ছুটি খান নৌকা থেকে নেমে এলে পরাগল খান তাকে আলিঙ্গনাবদ্ধ করে বন্দীমুক্তির জন্য ধন্যবাদ জানালেন। তিনি সব সেনাদেরও আলিঙ্গন করে ধন্যবাদ জানালেন।
গ্রামবাসীরা কৃতজ্ঞতা চোখে ছুটি খানদের গ্রামে স্বাগত জানালেন।
ছুটি খান সেনাদের বললেন, আমাদের কাজ এখনো শেষ হয়নি বন্ধু। এখন আমরা আগুনে পোড়া বাড়িগুলো মেরামত করব। সবাই কাজে নেমে পড়। বাঁশমুড়া থেকে বাঁশ কেটে আন। ঘর মেরামতের কাজ সেরে তবেই যাব আমরা।
ছুটি খানরা বিকেলের মধ্যে গ্রামের সকল বাড়ি নতুন করে গড়ে তুললেন। তারপর যার যার ঘর বুঝিয়ে দিলেন। পরাগল খান জামগাছের ছায়ায় বসে তাদের কাজ দেখছিলেন। মেরামত শেষ হয়ে গেলে গ্রামবাসীকে আবারও অভয় দিয়ে এবং তাদের নিরাপত্তার জন্য একশো সেনা নিয়োগ করে সকলে নৌকায় উঠলেন। গ্রামবাসীরা শিরনি রান্না করে তাদের আপ্যায়ন করেছিলেন। তার স্বাদ মুখে নিয়ে পরাগল খান সবাইকে নিয়ে রাজধানী জোয়ারগন্জে ফিরে এলেন।
চলবে........
No comments