হৃদয়ে বড় পাতা ঝরার শব্দ _ হাসনাহেনা রানুর কবিতা
হৃদয়ে বড় পাতা ঝরার শব্দ
সবুজ পাতা রং শাড়িতেই মেয়েটাকে বেশ মানিয়েছে
যদিও শাড়ি পরার বয়স হয়নি,
জোর করে পরানো
তবু মানিয়েছে বেশ
ওর নাম পাতা ।
ও সবুজ পাতার চেয়েও স্নিগ্ধ মোলায়েম
ওর দু'টি চোখ সমুদ্রের ঢেউ ভাঙে
গোলাপি ঠোঁট আগুন গোলাপ নিয়ে খেলা করে;
ওই ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসিতে
রাশি রাশি সবুজ মুক্তা ঝরে ।
ভাললাগে পৌঁষের শিওরে উত্তাপ ছড়ানো এমন মেয়েকে নিয়ে কবিতা লিখতে ---
পাতা সবার প্রিয় অসাধারণ এক মেয়ে ;
আঙুলের ফাঁকে ভোরের শিহরণ ভেঙে কাঁচা রোদ জেগে ওঠে,
ঘুম ভাঙা ভোরে সবুজ পাতায় শিশির বিন্দু চিকচিক করে
ওর অনিদ্রা চোখে স্বপ্ন দেখেছি আমি,
শেষ বিকেলে দু'পায়ে নূপুর পরে সারা গ্রাম কাঁপায়
কোন ক্লান্তি নেই মেয়েটার চোখে মুখে
এভাবে প্রতিদিন কেটে যায় ওর
বয়স মাত্র ১৩ বছর,
বয়স ওর এমন পুতুল খেলায় মত্ত।
হঠাৎ কি যে হল ,পাতাকে বিয়ে দিয়ে দিল
এক বছর পর:
ফুলের মতো নিষ্পাপ মেয়েটা এখন মা হতে চলেছে --
ও নিজেকেই সামলাতে পারে না,ওরই মধ্যে আর একটা শিশু বেড়ে উঠছে তিল তিল করে।
শহরের একটা হাসপাতালে পাতাকে ভর্তি করা হল
রাত বারোটায় প্রচন্ড চিৎকার ভেসে আসছে পাতার ওয়ার্ড থেকে ,
পাতা ভীষণ কাঁদছে
মুহুর্তে এক কঠিন দীর্ঘশ্বাসের আড়ালে পাতার নিঃশ্বাস চিরদিনের মতো চাপা পড়ে গেল
একটা স্বপ্ন'র মৃত্যু হল :
চাঁদ ও মূর্ছা গেল
রাতের শহরে ঘোর অন্ধকার নেমে আসল।
পাতার প্রাণপণ বেঁচে থাকার তীব্র আকুলতা মর্মবেদনায় রয়ে গেল।
স্মৃতি হিসেবে পাতা রেখে গেল ওর নবজাতক শিশু সন্তানকে;
এতদিন জানতাম পাতা ঝরার শব্দ হৃদয়ে বড় বেশি বাজে
এখন অসময়ে বৃষ্টি ঝরার শব্দ ও কম নয়।
পাতা এখন নক্ষত্র হয়ে গেছে
একদিন সন্ধ্যা বেলা মেঘের আঁচল ছিঁড়ে পাতা নামের নক্ষত্র কি ভীষণ বৃষ্টি হয়ে ঝরবে ।
সেই বৃষ্টির জল নূপুর শব্দে এক সমুদ্র ভরে যাবে
সমুদ্র তখন ব্যথাহত এক দুঃখ সমুদ্র হয়ে উঠবে ।
হাসনাহেনা রানু
No comments