Header Ads

মায়া _ শামসুন ফৌজিয়ার লেখা ভুতের গল্প

মায়া

ইদানীং আমি ঘুমাতেই পারিনা। ঘুমুতে গেলে ঐ দুঃসহ স্মৃতি ফিরে আসে ফিরে আসে সেই মুখ। স্মৃতি ফিরে আসলে আমি ও কেমন যেন হয়ে যাই।
আমি মুহিন, থাকি বন্ধুদের সাথে মেসে রুম শেয়ারে।বন্ধু বলতে রুমমেট! আমার ঘুমের সমস্যার সাথে জাগরণের আর এক্সট্রা সমস্যার কারণে কেউ থাকতে চায় না। সবাই কেমন সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকায়।
তাই গত পাঁচ বছর আগে কিছু সাশ্রয়ী মূল্যে থাকব বলে স্টেইট বদল করি, মিশিগানে ওয়ারেন থাকি একটা পুরো ঘর ভাড়া করে।
আমি একসাথে বেশিদিন কাজ করতে পারিনা আবার কন্টিনিউ কাজ ও পাওয়া যায় না।
ঘটনার শুরুটা ছিল এভাবে,কাজ হতে ফিরছিলাম ট্রেনে , রাত তিনটে দশ বাজে। নিউইয়র্কে এটা কোন ব্যাপারই না। চব্বিশ ঘন্টা জেগে থাকা নগরী। একটা ছেলে ও একটা মেয়ে মেক্সিকান, দুজনে খুব জোরে জোরে কথা বলছিল। এক পর্যায়ে তাদের হাতাহাতি শুরু হয়! ফিরছিল বীচ হতে সামার ছিল তখন।মদের বোতল ভেঙে ছেলেটি মেয়েটিকে আঘাত করল! সাথে রক্তে সয়লাব! মেয়েটি ও মারছে! আমি কী করব কিংকর্তব্যবিমূঢ়! ভয়ে গা কাঁপছে, পুলিশ ডাকব চলন্ত ট্রেন! মাথা কাজ করছিল না। রক্তাক্ত দেহ মেয়েটির ফ্লোরে পড়ে আছে! আর ছেলেটি কটমত চোখে আমার দিকে চেয়ে আছে। ভয়ে মরে গেলাম! ওরা শুনেছি খুব নৃশংস হয়। এক্ষুনি আমাকে মারতে আসবে। ছেলেটি একটু একটু করে এগিয়ে আসছে আর আমি পিছু হটছি।যখন নাইফ বের করল মরিয়া হয়ে শেষ বারের মত হুঁশ করে ট্রেনের চেন ধরে টান দিলাম। এর পরের ঘটনা মনে নেই । আমি জ্ঞান হারালাম।
চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি হাসপাতালের বেডে। কিছুক্ষণ পর পর নার্স , ডাক্তার সোশ্যাল ওয়ার্কার আসছে এটা সেটা জেনে নিচ্ছে প্রশ্ন করে। হাসপাতাল হতে ছাড়া পেলে ও ঐ ঘটনা আমাকে তাড়া করে। রাতে কাজ শেষে ফিরতে গেলে মনে হয় আমার পাশে যারা বসে আছে সবাই অশরীরি আত্মা। গভীর রাত, এখনো বেশ স্টপিজ বাকী। চোখটা বুজে আছি। শীতল একটা হাতের স্পর্শে আমার তন্দ্রা ছুটে গেলো। কী অদ্ভুত সেই মেক্সিকান মেয়ে যে খুন হয়েছিল। মেয়েটির চুল লম্বা আর বিনুনি করা যা পার্লারে এক্সট্রা বানিয়ে নেয়া যায়। আমি সরে বসার চেষ্টা করলাম। মেয়েটি আরো কাছে ঘেঁসে বসল, why you left me that day? Today I’ll take you. If you don’t listen to me just remind your life will be danger.
আমি ভেবে পাচ্ছিলামনা খুন হওয়া মেয়েটি কিভাবে ফিরে আসল? আমি অপেক্ষায় পরের স্টপিজে নেমে যাবো এবং নামলাম। পেছন থেকে কে যেন আমার নাম ধরে ডাক দিলো। ফিরে দেখি ঐ মেয়েটি এবার সে ভয়ংকর রুপ নিয়ে সামনে। ওঁর চুলের বিনুনি গুলো সাপ হয়ে কিলবিল করছে আর স্টেশনে এত মানুষ থাকতে আমাকে কেন ফলো করে? আমি সাবওয়ে ইনফরমেশন বুথে ট্রাই করলাম পুলিশ কল দিতে। পুলিশ এলো কিন্তু স্টেশন ভর্তি প্রেতাত্মরা তারা দেখতে পেলো না। উল্টো আমারে নিয়ে চলল।
ঐ মেয়েটির সাথে আমার প্রায়ই দেখা হতো। তাই ভাবলাম স্টেট চেন্জ করে ফেলি , তাছাড়া নিউইয়র্কে ভীষণ কস্ট।
আমি বাগানে যখন কাজ করি দেখি মার্থা মানে ঐ মেয়েটি আমাকে মুক্তি দেয়না। ভিন্ন ভিন্ন রুপে সে হাজির হয়। রাতে সে বরফের মাঝে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে বাইরে।বাড়ীটাকে ভুতুড়ে মনে হয় রাত বাড়ার সাথে। রুমের লাইট অফ করে দেখি লম্বা একটা ছায়া দাডঁড়িয়ে আছে। ঘরে প্রবেশ করতে দরজা খুলে দিতে হয়না, সে এমনিতে ঢুকে যায়। আমাকে মায়াবিনী ডাকে আর আমি ও মন্ত্রমুগ্ধের মত ফলো করি। মার্থার ঠাণ্ডা হাত আর পাথরের মত চোখ আমাকে মুক্তি দেয়না।

Shamsun Fouzia
New York, USA

No comments

Powered by Blogger.