বিশ্ব শিক্ষক দিবসঃ মানুষ গড়ার কারিগরদের প্রতি রইলো শ্রদ্ধা
বিশ্ব শিক্ষক দিবসঃ মানুষ গড়ার কারিগরদের প্রতি রইলো শ্রদ্ধা।
হাদিসে আছে, দোলনা হতে মৃত্যু পর্যন্ত তোমারা শিক্ষা অর্জন করো। আমরা শিক্ষা গ্রহণ করি অবিরত, আজীবন। আমরা প্রতিদিন শিখি। জীবন ও জীবনের ডায়েরি আমাদের প্রতিদিনের অভিজ্ঞতায় অনেক কিছু শিখতে বাধ্য করে। আমরা হোঁচট খেতে খেতে শিখি। আমরা অনেক সময় ভুল করি। আবার এই ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে নতুন করে শিখি। ছাত্র জীবনে অনেক কিছু শিখি, যা পড়াশোনা পরবর্তী জীবনে অনেক কিছু কাজে লাগে আবার অনেক কিছু কাজে লাগে না।
আজ ৫ই অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস। আজ এইদিনে সকল শিক্ষক/শিক্ষিকা/ শিক্ষাগুরুদের জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। আমাদের আসল এবং প্রথম শিক্ষাগুরু হচ্ছে আমাদের মা। আমরা যতবড় শিক্ষিতই হই না কেন, মা হচ্ছে আমাদের মূল শিক্ষাগুরু। নার্সারি বা স্কুলে ভর্তি জীবনের আগে পর্যন্ত তো আমরা বাড়িতেই অ আ ক খ,বাবা মায়ের কাছ থেকে শিখি। ছোট বয়স থেকে শুরু করে চলতে শেখা, কথা বলতে শেখা সবই আমাদের পরিবার থেকে হয়। খুব অল্প বয়স থেকেই আমাদের আমাদের শিক্ষার হাতেখড়ি তাদের হাত ধরেই। আমাদের বাবা ও মা-ই আমাদের প্রথম ও পরম গুরু। জীবনযাপনের অন্যতম শিক্ষক।
জীবনের সর্ব সময় বাবা-মা হচ্ছে আমাদের প্রিয় শিক্ষক। আমরা তাদের স্নেহে, প্রশ্রয়ে, শিক্ষায়, সহমর্মিতায়, মরমী সমালোচনায়, চরিত্র গঠনের দৃঢ় শিক্ষায় আমরা সমৃদ্ধ হতে থাকি প্রতিনিয়ত। শৈশব থেকে আমরা যা শিখি তা থেকে আমাদের প্রতিটি আচরণের বাহ্যিক প্রকাশ কী হবে তা সিদ্ধান্ত নেওয়া তাদের উপর নির্ভর করে। আমাদের নিজের পছন্দ-অপছন্দ, আমাদের দায়িত্ববোধ, অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা, প্রবীণদের প্রতি শ্রদ্ধা, নিজের পারিবারিক রীতিনীতিগুলির প্রতি শ্রদ্ধা এগুলি আমরা পরিবার থেকেই শিখি। আমাদের আদর্শ, আমাদের চরিত্র নির্মাণ, সবকিছুই পরিবারের গুরুজনদের কাছ থেকে গৃহীত হয়। শিক্ষক দিবসের প্রাক্কালে আমরা আমাদের পিতামাতাকে প্রথম এবং অন্যতম গুরু বা শিক্ষক হিসেবে স্মরণ করি এবং অবনত মস্তকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাই।
দেশের অগণিত শিক্ষকদের মহান আদর্শিক কাজের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং তাদের পেশাদার অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সমগ্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই মহান শিক্ষক পালন করার রীতি রয়েছে। শিক্ষক দিবসের এ নির্দিষ্ট দিনটি দিনটি বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন দিনে পালন করা হয়ে থাকে। যেমন বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই ৫ অক্টোবর, ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ হিসেবে পালিত হয়। UNICEF থেকেও, ৫ অক্টোবর দিনটিই ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবসের’ স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষক দিবসটি বিশ্বজুড়ে মোট ১৯ টি দেশে ৫ অক্টোবর পালিত হয়। দেশগুলি হলোঃ কানাডা, জার্মানি, বুলগেরিয়া, আজারবাইজান, এস্তোনিয়া, লিথুয়ানিয়া, ম্যাসেডোনিয়া, মালদ্বীপ, নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, কুয়েত, কাতার, রাশিয়া, রোমানিয়া, সার্বিয়া, ইংল্যান্ড, মরিশাস, মলদোভা।
বিশ্ব শিক্ষক আবার বিশ্বের অন্য ১১টি দেশে ২৮ ফেব্রুয়ারি দিনটিতে পালন করে থাকে, দেশগুলি হল মরক্কো, আলজেরিয়া, টিউনেশিয়া, লিবিয়া, ইজিপ্ট, জর্ডন, সৌদিআরব, ইয়েমেন, বাহরেইন, ইউ এ ই, ওমান।
১৯৯৪ সালের ৫ অক্টোবর থেকে ইউনেস্কো দ্বারা ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ দিনটি সূচিত হয়। এটি সারা দেশ-বিদেশে ‘শিক্ষক’ পেশাজীবীদের জন্য সেরা সম্মান। পরবর্তী প্রজন্মও যাতে কার্যকরী ও যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে এই দিনটি পালন করে সেটাও উদ্দেশ্যা। এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল বিশ্বাস করে যে বিশ্বজুড়ে জাতীয় স্তরে একটি বিশেষ দিনকে স্বীকৃতি দেওয়া জরুরী - এমন একটি দিন যা সমাজ সংস্কার এবং শিক্ষায় শিক্ষকদের যথাযথ স্বীকৃতি দেওয়ার যোগ্য দিন।
ভারতে, ওই দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডাঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের জন্মদিন 'শিক্ষক দিবস' হিসাবে বিশেষ মর্যাদায় পালিত হয়। 'ভারতরত্ন' উপাধি নিয়ে খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ ডঃ রাধাকৃষ্ণান একজন দুর্দান্ত দার্শনিক এবং আদর্শ বিচারক ছিলেন। শুধু তাই নয়, তিনি ছিলেন প্রথম উপরাষ্ট্রপতি এবং স্বাধীন ভারতের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি। তিনি ছিলেন একজন বক্তা, অধ্যাপক, রাজনীতিবিদ এবং দার্শনিক যিনি অদ্বৈত বেদন্ত রচনা করেছিলেন।
শোনা যায় তাঁর কিছু প্রিয় শিক্ষার্থী এবং প্রফেসর বন্ধুরা যখন তাঁর জন্মদিন উদযাপনে আগ্রহী হয়েছিলেন, তখন রাধাকৃষ্ণান তাদের বলেছিলেন, "আমার জন্মদিন আলাদাভাবে পালন না করে দেশের সকল শিক্ষকের জন্য দিনটি উদযাপিত হলে আমি গর্বিত হব।"
পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু বলেছিলেন, যদিও তিনি বহু সক্ষমতাতে জাতির সেবা করেছেন। তথাপি অনেক কিছু শিখেছেন এবং প্রতিনিয়ত শিখতে হবে যার কাছ থেকে তিনি হচ্ছেন একজন মহান শিক্ষক।
এটি মূলত সত্য যে শিক্ষকতা এখন পর্যন্ত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পেশা।সমালোচকরা অনেকে কথা বলে থেকে। আমিও ছোট্ট একটি সমালোচনা করি, এক সময় সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক পাশ শিক্ষিকা নিয়োগ দিয়েছেন। শিক্ষকদের মধ্যে নারী-পুরুষ সমতা আনার জন্য, নারীর যোগ্যতা মাধ্যমিক=পুরুষের যোগ্যতা ডিগ্রী পাশ। একটি সেকটরে সমতা আনার জন্য শিক্ষার মান রসাতলে দিয়ে সমতা আনয়ন কতটুকু যৌক্তিক? এটি শিক্ষার মানকে চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে বলে আমি মনে করি।
যাই হোক, শিক্ষকদিবস আমাদের কাছে একটা মহান দিবস হিসেবেই সূচিত হয়। এ কারণেই প্রাচীন গ্রীক দার্শনিক এরিস্টটল একবার বলেছিলেন, যাঁরা শিশুদের শিক্ষাদানে ব্রতী তাঁরা অবিভাবকদের থেকেও অধিক সম্মাননীয়। পিতামাতা আমাদের জীবনদান করেন ঠিকই। শিক্ষকরা সেই জীবনকে সুন্দর ভাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করেন। পরিশেষে আমি বলবো শুধু শিক্ষকদিবস নয় আসুন মানুষ গড়ার কারিগরদের সব সময় শ্রদ্ধা করি।
মোহাম্মদ সহিদুল ইসলাম
#সহিদুল
No comments