মীর সাহেবের সরাই ❑ সেলিম ইসলাম খান ❑ ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব_২৪
মীর সাহেবের সরাই
সেলিম ইসলাম খান
❑
উপন্যাস
ত্রিপুরার রাজা
ধন্যমানিক্য রাজবাড়ির সামনের বিশাল মাঠে সেনাদের উদ্দেশ্য ভাষণ দিচ্ছেন। সেনারা
সারিবদ্ধভাবে শৃঙ্খলার সাথে তার ভাষণ শুনছে।
রাজা বলছেন, হে প্রিয়
সেনারা! এই ত্রিপুরা তোমাদের দেশ, এই ত্রিপুরার মাটি, মা ও সম্মান আজ তোমাদের উপর
নির্ভর করছে। তোমরা যদি রণে জয়লাভ করো, তাহলে এই ত্রিপুরা রক্ষা পাবে। এই মা, মাটি
ও তোমাদের স্বজনরা রক্ষা পাবে। আর যদি আমাদের শত্রুরা জয়লাভ করে তারা সব কিছু দখলে
নেবে। তারা সব ছারখার করে দেবে। তোমাদের দেশ দখল করে তোমাদেরকে বিতাড়িত করবে তারা।
তোমরা কি তা হতে দেবে।
সেনারা সমস্বরে বলল, না
না! তা হতে পারে না।
তাহলে তোমরা সেনাপতি
রাইচাগের নেতৃত্বে রণে ঝাপিয়ে পড়। দেশমাতাকে রক্ষা কর।
সেনারা সমস্বরে বলল,
আমরা লড়াই করব, রণে জিতব।
এরপর রাইচাগ
তীরন্দাজদের আগে অগ্রসর হতে হুকুম দিলেন। তারপর অশ্বারোহী ও হস্তীবাহিনী, সবশেষে
পদাতিক বাহিনী। সেনাপতি রাইচাগের হুকুমে তারা এগিয়ে চলল দখিনের গিরিখাদে গিয়ে তারা
তাবু ফেলল।
সেনাপতি রাইচাগ দেখলেন,
খান সেনারা গিরি খাতের অদূরে একটি উঁচু মালভূমিতে তাবু ফেলেছে। তাদের পূবপাশে একটি
পাহাড় সে পাহাড়ের ঢালুতে তাদের তীরন্দাজ বাহিনী আক্রমণের ইশারায় রয়েছে। সেনাপতি
রাইচাগ তীরন্দাজদের সামনে রেখে রণকৌশল প্রস্তুত করে নিলেন। তারপর শেষ বিকেলে তিনি
তীরন্দাজদের তীর নিক্ষেপের হুকুম দিলেন। কিন্তু তীরন্দাজদের তীর মালভূমির উপর
পর্যন্ত পৌঁছালো না। অপর দিকে খানসেনারা পাহাড় থেকে গাছের আড়াল নিয়ে যে তীর
নিক্ষেপ শুরু করল, সেগুলো তীরন্দাজ বাহিনীকে ছত্রখান করে দিল। ফলে শুরুতেই তার
সেনারা বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ল। তিনি চিতকার করে তীরন্দাজদের সারি ঠিক রাখতে হুকুম
দিলেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা? তীরন্দাজরা খান সেনাদের তীরের আঘাতে দিক্বিদিক
পালাতে লাগল। তার প্রভাব পড়ল অশ্বারোহী, হস্তীবাহিনী ও পদাতিক বাহিনীর উপর। তারাও
পুবের পাহাড় থেকে আসা তীর বৃষ্টির শিকার হয়ে পালাতে লাগল। মুহূর্তে মাঠ খালি করে
তারা রাজপ্রাসাদের দিকে পিছু হটল।
সেনাপতি রাইচাগ তাদের
উপর রাগান্বিত হয়ে রাজার কাছে নালিশ দিলেন। রাজা আজকের জন্য যুদ্ধ মুলতুবি রাখার
হুকুম দিলেন। এদিকে খানসেনারা ত্রিপুরা সেনাদের ধাওয়া করে রাজপ্রাসাদের কাছাকাছি
এসে গিয়েছিল। তাদের তীরন্দাজরাও পুবের পাহাড়ের উত্তর ঢালে চলে এল। রাজা প্রমাদ
গুনলেন। এখন পাহাড় থেকে তীরবৃষ্টি শুরু হলে সব তীর তার রাকপ্রাসাদের ভেতরে পড়বে।
অবস্থা বেগতিক দেখে তিনি প্রাসাদ শিখর থেকে ত্রিপুরার পতাকা নামিয়ে সাদা ঝান্ডা
লাগিয়ে দিলেন। কিন্তু শান্তি আলোচনার জন্য খান সেনাপতি ছুটি খানের কাছে কোন দূত
পাঠালেন না। তিনি সভাসদদের নিয়ে আলোচনায় বসলেন।আলোচনায় সিদ্ধান্ত হল, খানসেনারাদের
কাছে দূত পাঠানো হবে প্রয়োজনে গ্রেফতার করা বারোজন সুলতানের কর্মকর্তাকে ফেরত দেয়া
হবে তবু যেন তারা ফিরে যায়।
সে অনুযায়ী দূত পাঠানো
হল, কিন্তু দূত এসে জানালো বারোজন কর্মকর্তার মুক্তির পাশাপাশি অধিকৃত সব এলাকা
ফেরত না দিলে খানসেনারা উদয়পুর থেকে যাবে না। দূতের কাছে এ কথা শুনে রাজা আবার
আলোচনায় বসলেন। আলোচনায় সিদ্ধান্ত হল, বারোজন বন্দীকে ফেরত দেয়া হবে কিন্তু অধিকৃত
এলাকা ফেরত দেয়া হবে না। খানসেনারা সাফ জানিয়ে দিল বন্দীমুক্তি ও এলাকামুক্তি দুটো
না হলে খানসেনারা ফেরত যাবেন না। রাজা ধন্যমানিক্য একথা শুনে কোন আলোচনায় না বসে
রেগে অগ্নিশর্মা হয়ে বারোজন কর্মকর্তার শিরোচ্ছেদ করলেন। তারপর তাদের মস্তক
খানসেনানায়কের কাছে পাঠিয়ে যদ্ধের দামামা বাজিয়ে দিলেন। রাজবাড়ির শিখর থেকে সাদা
ঝান্ডা নামিয়ে যুদ্ধের লাল নিশান টাঙানো হল।
চলবে........
No comments