ডাকাতের খপ্পরে একদিন _ আব্দুল্লাহ জিয়াদ
ডাকাতের খপ্পরে একদিন (সত্য কথন)
আব্দুল্লাহ জিয়াদ
২০০৯ সালের জুন মাসের কোন একদিন। ঢাকা থেকে নীলফামারী ফিরছিলাম নাবিল পরিবহনের একটি বাসে। রাত ১টায় ফুড ভিলেজে ডিনার সেরে স্ত্রী ও শিশু কন্যার জন্য দই ও কিছু মিষ্টান্ন দ্রব্য কিনে রওয়ানা দিয়েছি। মিনিট বিশেক এর পথ অতিক্রম করেছি। সবে তন্দ্রা ভাব এসেছে। হঠাৎ গাড়িতে প্রচন্ড ঝাঁকুনি, তন্দ্রাভাব কেটে দেখলাম আমাদের গাড়ির সামনের গাড়িটা হুট করে থেমে যাওয়ায় ড্রাইভার কষ্টে এক্সিডেন্ট এড়িয়ে ওটাকে ওভারটেক করে সামনে এগিয়ে গেল।
দুই মিনিটও যায়নি, দেখলাম রাস্তার উপর বিশাল বিশাল দুটো গাছ পড়ে আছে।দিলটা চড়াক করে উঠলো। ড্রাইভার চেষ্টা করেও গাছ দুটোকে মাড়িয়ে যেতে পারলেন না। উল্টো বৃষ্টিতে রাস্তা ভেজা থাকায় কাঁচায় নেমে দেয়া সামনের একটি চাকা দেবে গেল ও স্টার্ট বন্ধ হয়ে গেল। দেখলাম কলা ক্ষেতের ভিতর থেকে ডাকাতের দল সুরসুর করে রাস্তায় উঠে আসছে। সবার হাতে কাস্তের মত ভোতা টাইপের অস্ত্র, দু’একজনের হাতে পিস্তল সদৃশ কিছু।
মুখোস পড়া এই ছোকরা গুলোর বয়স ১৮/২০ হবে। এদের নেতা কলা ক্ষেতের ভিতর থেকে বগুড়ার আঞ্চলিক ভাষায় বলছে ; সব যাত্রীকে বাস থেকে নেমে ফেলো,অপ্রয়োজনে কাউকে আঘাত করবা না, মেয়েদের গায়ে হাত দিবা না। মনে মনে ভাবলাম অভাবের দায়ে ডাকাত হলেও এরা ধর্ষকের চেয়ে ভাল।
অন্যান্য যাত্রীর মত আমিও শেষ পর্যন্ত নামলাম। ভাবলাম ট্রেনিং থেকে পাওয়া সন্মানীর অবশিষ্ট দুই হাজার টাকা খোয়া যায় যাক,কিন্তু স্ত্রী সন্তানের জন্য কেনা ভালবাসা অর্থাৎ তাদের প্রিয় দই আমাকে রক্ষা করতেই হবে।
যাত্রী ডাকাত মিলেমিশে একাকার হওয়া রণক্ষেত্রের মাঝে আমি বাসে আলতো করে হেলান দিয়ে দাড়ালাম। পাঁচ আঙ্গুল ব্যবহার করে মাথার লম্বা চুলগুলো খাড়া করলাম। দুহাত জিন্সের প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে মুষ্টিবদ্ধ করলাম।
ডাকাতদের মূল টার্গেট ছিল মহিলারা, ইচ্ছেমতো মহিলাদের সোনার অর্নামেন্টস লুট করছিল,বয়স্ক মানুষদের মোবাইল, ঘড়ি,মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিচ্ছিল। আমার দিকে দুটো ছোকরা আসতে ধরে আবার পিছিয়ে গেল,সম্ভবত ভেবেছিল আমার পকেটে অস্ত্র থাকতে পারে। যাইহোক ১০/১২ মিনিট লুটপাট এর পর পুলিশের গাড়ির হুইসেল শোনা গেল। সর্দার কলাক্ষেত থেকে ঘোষনা দিলেন,তোমরা এখন চলে এসো।
ডাকাত দল চলে গেল,আমরা ৪/৫ জন ইয়ংম্যান শুধু লুটপাটের আওতা মুক্ত থাকলাম। ভাবলাম ট্রেনিং এর টাকাটা বোধ হয় আমার খুব হালাল ছিল। পুলিশ আসার পর গাড়িটাকে স্টার্ট দেয়ার চেষ্টা করা হলো কিন্তু স্টার্ট নিচ্ছিল না,তাছাড়া ড্রাইভারের হাতে আঘাত করায় সেও গাড়ি চালানোর জন্য আনফিট ছিল।
অগত্যা কী আর করা,দিনাজপুরের একটি গাড়ী ধরে ইন্জিন কভারে বসে নীলফামারীর দিকে রওয়ানা দিলাম।।
No comments